সোমেনদা : এক বিরল প্রজ্ঞার অধিকারী

বিজয়কুমার দাসঃ

সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর কাছের এবং দূরের মানুষেরা অধিকাংশই “সোমেনদা” বলেই ডাকতেন। আর সোমেনদা সাড়াও দিতেন সেই ডাকে সানন্দ চিত্তে। আমাদের জেলায় একটা সময় কার্যত সোমেনদাকে বাদ দিয়ে বড় মাপের অনুষ্ঠান, আলোচনা শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে বৈঠক ভাবাই যেত না। আর তিনি সানন্দে রাজী হতেন সবার ডাকে। তাঁর বক্তব্যে থাকত মেধার বিদ্যুৎ।অর্থাৎ যেটুকু বলতেন, তার জন্য যে যথেষ্ট পড়াশুনো করে আসতেন তা বলার অপেক্ষা রাখত না। তাই তাঁর বক্তব্য শুনতে হত নিবিড় মনোযোগের সঙ্গে। এমন অনেক অনুষ্ঠানে শ্রোতা হিসাবে অথবা আয়োজক হিসাবে অথবা সঞ্চালক হিসাবে থাকার সুযোগ হয়েছে যেখানে একই অনুষ্ঠানে বক্তা ড: রমারঞ্জন মুখোপাধ্যায় এবং সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। দুজনেই সুবক্তা, পণ্ডিত। বক্তব্য যে কত শ্রুতিসুখকর হতে পারে তার অন্যতম দৃষ্টান্ত এই দুই বাগ্মী। নয়াপ্রজন্ম, সবুজের অভিযানের অনুষ্ঠানে কাঞ্চনের ডাকে বারবার এসেছেন সোমেনদা। কোঁচানো ধুতি, দুধ সাদা পাঞ্জাবী, শান্তিনিকেতনের উত্তরীয় গলায়। বড় মৃদুভাষী ছিলেন। বক্তব্যেও সেই মৃদু কণ্ঠ, কিন্তু ঋজু উচ্চারণ। কাঞ্চনের কথায় জেলার বহু অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন সোমেনদা। সব অনুষ্ঠানেই সুন্দর বক্তব্য রেখেছেন।অনেক বিজ্ঞজনের বক্তব্য শোনার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে, তাঁদের অনেকেই ভাবেন খ্যাতিটাই যথেষ্ট। বক্তব্য গৌণ। কিন্তু সোমেনদা ব্যতিক্রম। রীতিমত প্রস্তুত হয়ে যেতেন। তিনি মনে করতেন, কথার যাদু একটা মন্ত্রের মত কাজ করে শ্রোতাদের কাছে।এটাই সোমেনদার বিশেষত্ব ছিল। নয়াপ্রজন্ম থেকে সোমেনদাকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা করার উদ্যোগ নিল কাঞ্চন। কিছুটা দায়িত্ব আমার ওপরেও বর্তেছিল। সেই সূত্রে সোমেনদার শান্তিনিকেতনের বাড়ি যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। অবাক হয়ে দেখেছিলাম, কী পরিপাটি সাজানো গোছানো একটা ঘর। সর্বত্র রুচির ছাপ। আর রবীন্দ্রনাথ যে তাঁর কতখানি আরাধ্য ছিল তা বুঝেছিলাম সেদিন তাঁর সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলোচনার সুযোগে। এই হলেন সোমেনদা। এমন প্রাজ্ঞ সুপন্ডিত মানুষের প্রয়াণ সারস্বত সমাজের অনেকটা ক্ষতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *