কুস্তিতে রাজ্যস্তরে পদক, নজর কাড়লো বীরভূমের দীঘলগ্রামের দুই যুবক

দীপক কুমার দাসঃ

নেই কোন প্রশিক্ষক, জোটে না প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় প্রোটিন খাবার তবুও মনের অদম্য জেরে ও হার না মানা মানসিকতার জন্য কুস্তিতে রাজ্যস্তরে পদক পেলো বীরভূমের মহঃ বাজার ব্লকের দীঘলগ্রামের দুই যুবক হাসিরুল শেখ ও মুস্তাকিম শেখ। গত ১৩ মে থেকে ১৬ মে বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালনায় অষ্টম নেতাজী সুভাষ স্টেট গেমসের আয়োজন করা হয় কলকাতার জোড়াবাগানে। সেখানে ৫০-৬০কেজি বিভাগে চ্যাম্পিয়ান হয় হাসিরুল শেখ। আর ৬০-৬৭ কেজি বিভাগে তৃতীয় স্থান পায় মুস্তাকিম শেখ। দু’জনের বাড়ি মহঃ বাজার ব্লকের দীঘলগ্রামে। হাসিরুল শেখ সেকেড্ডা হাইস্কুল থেকে এবার মাধ্যমিকের পরীক্ষা দিয়েছে। আর মুস্তাকিম শেখ গণপুর হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। দুজনে পরস্পরের বন্ধু ও কুস্তির প্র্যাকটিশ পার্টনার। রাজ্যস্তরে সাফল্যের পর ওদের লক্ষ্য জাতীয় স্তর থেকে পদক আনা এবং আগামীতে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা।বীরভূম জেলায় কোনো ক্লাবে নেই কুস্তির চর্চা। নেই কুস্তির জন্য কোনো প্রশিক্ষক। তাই দুইজনের মুর্শিদাবাদের কান্দিতে একটি আর্মি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। কোচ সাইফুল খানের অধীনে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ নিতে নিতেই নবগ্রাম আর্মি ক্যাম্পে জেলাস্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পদক জয়। সেখানে বিশিষ্ট কোচ নন্দন দেবনাথ এর পরামর্শে কলকাতার জোড়াবাগানে বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালনায় অষ্টম নেতাজী সুভাষ স্টেট গেমসে অংশ নেয়। আর সেখানেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে পদক জয়। এখন দুইজনের লক্ষ্য জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পদক জয়। হাসিরুলের বাবা নাজিম শেখ পেশায় চায়না ভ্যান চালক। রোজগার সামান্য। অপরদিকে মুস্তাকিমের বাবা গত হয়েছে বছর পাঁচেক আগে। দাদা মহঃ হাসান শেখ পাথর খাদান এলাকায় এক্সকাভেটর অপারেটর। দাদা উৎসাহ দেন খুব। কিন্তু বীরভূমে কুস্তির চর্চা নেই বললেই হয়। নেই কুস্তি চর্চার ম্যাট। দুই বন্ধু গ্রামেই বালির মধ্যে নিজেদের মধ্যে কুস্তির চর্চা করে। প্রশিক্ষকের অভাব বারবার অনুভবে করছে ঐ দুই যুবক। তবুও হারবার পাত্র নয় তারা। সব প্রতিবন্দ্বকতা জয় করে জাতীয় স্তরে পদক জয় করতে কঠোর অনুশীলনে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে। রাজ্যস্তরে পদক জয়ের পর উৎসাহ দিচ্ছেন অনেকেই। ছোট থেকেই তাদের উৎসাহিত করেছেন ও নানা ভাবে সাহায্য করেছেন দীঘলগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহঃ নাজেমহোসেন ও আরেক শিক্ষক মুস্তাফা সিরাজ। উৎসাহ দিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান রুসাই আলি, মহঃ বাজার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আব্দুল সালাম, মহঃ বাজার থানার ওসি তাপাই বিশ্বাস। হাসিরুল শেখ ও মুস্তাকিম শেখ দুজনেই সাধারণ পরিবারের সদস্য। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার জোগানোর সামর্থ্য নেই তাদের পরিবারের। নেই কুস্তি চর্চার ম্যাট ও প্রশিক্ষক। প্রশাসন এ ব্যাপারে তাদের সাহায্য করুক যাতে তারা জাতীয় স্তরে জয়ী হয়ে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। তাদেরআবেদন প্রশাসন ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *