সনাতন সৌঃ
গত ৭ জুলাই বীরভূম ঝাড়খণ্ড সীমান্ত লাগোয়া দিগুলী গ্রামে ইতিহাস প্রসিদ্ধ সাঁওতাল কাটা পুকুর চত্বরে সাঁওতাল বিদ্রোহীদের অমর শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান হয়ে গেল এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে। সাঁওতাল বিদ্রোহীদের মর্মান্তিক ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে অমর শহীদের আত্মবলিদান ভূমিকে সম্মান জানাতে ও জন জাগরণ করতে এদিন সকালে পাথরা ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ আশ্রম থেকে আদিবাসীদের সুসজ্জিত একটি বিশাল পদযাত্রা দিগুলী সাঁওতাল কাটা পুকুরে হাজির হয়। এই পদযাত্রায় অংশ গ্রহণ করেন বীরভূম, বর্ধমান, পুরুলিয়া জেলার ও ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বুদ্ধিজীবীরা। পরে সাঁওতাল কাটা পুকুর চত্বরে অমর শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রথমেই মর্মান্তিক স্মৃতি বিজড়িত পুকুরে গিয়ে অমর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক দিয়ে অর্পণ করা হয়। অনুষ্ঠানে সাঁওতাল বিদ্রোহের সময় মর্মান্তিক ইতিহাসের কথা তুলে ধরে বিস্তারিতভাবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ আশ্রমের মুখ্য পরিচালক স্বামী নিত্যব্রতানন্দ মহারাজ, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা সমিতির রাজ্য সম্পাদক গৌতম চট্টোপাধ্যায়, আদিবাসী সংগঠনের সভাপতি পরমেশ্বর হেমব্রম, সচ্চিদানন্দ সরেন, বেল টুডু, সনাতন মুর্মু, কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর আব্দুল রইস খান প্রমুখ। এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে জাতীয় আদিবাসীদের সমাজ সংগঠনের গোটা ভারত সিধু – কাণু হুল বৈশী কমিটি, রাণীশ্বর ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ আশ্রম ও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা সমিতি। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে জন জোয়ার পরিণত হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ নলিন সরেনের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৮৫৫ সালে ৩০ জুন তদানীন্তন ইংরেজদের অমানবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়। সে সময় ইংরেজদের মদতপুষ্ট মহাজনদের শোষণ ও নির্মম নির্যাতনের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের জননেতা সিধু কাণুর নেতৃত্বে দিগুলী – কেন্দুলী গ্রামের কাছে সাঁওতালদের চরম লড়াই হয়েছিল। এই লড়াইয়ে ইংরেজদের অত্যাধুনিক অস্ত্রে ও বন্দুকের গুলিতে কয়েক হাজার লড়াকু সাঁওতালদের প্রাণ যায়। সাঁওতালদের মৃতদেহ দিগুলী সাঁওতাল কাটা পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।পরে জননেতা সিধু- কাণুকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়। অমানবিকভাবে সিধু কাণুকে হত্যা করে ফাঁসি দেওয়া হয়।পরে তদানীন্তন ইংরেজ সরকার সাঁওতালদের ন্যায্য দাবী অনুযায়ী বীরভূম জেলার পশ্চিমের কয়েকটি জঙ্গল মহল অঞ্চল সাঁওতাল পরগণা জেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।২০০০ সালে বিহার থেকে ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠিত হওয়ার পর বিশিষ্ট শিক্ষক প্রয়াত শ্রীদাম বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা ইতিহাস গবেষক গৌতম চট্টোপাধ্যায় এর নেতৃত্বে এই সাঁওতাল কাটা পুকুরটিকে সরকারি মর্যদার দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করেন। অবশেষে সরকার সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মান্যতা দেয় এবং জাতীয় পর্যটনস্থল হিসেবে বলে ঘোষণা করে। এই পর্যটনস্থল স্থানটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা হয় তার জন্য ওই তিন সংগঠনের পরিচালক কমিটির উদ্যোগে দুঃসাহসিকভাবে কাজ করছেন।