
শম্ভুনাথ সেনঃ
১ সেপ্টেম্বর আফ্রিকা মহাদেশের মিশরের কায়রোতে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। চলবে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ৮৮ টি দেশের শিল্পীরা এই উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করলেও মাত্র ৮টি দল সেখানে যাবার সুযোগ পেয়েছে। আর সেই উৎসবে ভারত থেকে একমাত্র দল পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুরের “বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী” মানব পুতুল নাটক “বেহুলা লক্ষীন্দর” পালা নিয়ে বিশ্ব দরবারে মঞ্চস্থ করবে। বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনীর ১২ সদস্যের নাট্যদল আগামী ৬ সেপ্টেম্বর দমদম বিমানবন্দর থেকে আকাশ পথে মিশরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে এ তথ্য জানিয়েছেন সংস্থার কর্ণধার তথা শিক্ষক ড. উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়। কায়রোতে নাটক মঞ্চস্থ হবে ৯-১০ সেপ্টেম্বর। আর তার আগেই মিশরে ভারতীয় দূতাবাসে এই নাটকটি মঞ্চস্থ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তবে এমন আনন্দের মাঝেও নিদারুণ দুঃখের খবর এই ১২ সদস্যের মধ্যে গত ২৩ আগস্ট এক শিল্পী রথীন্দ্রনাথ ভাণ্ডারীর অকাল প্রয়াণে জেলা জুড়ে নেমেছে শোকের ছায়া। দিন দশেকের জ্বর উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। ছুটি নিয়ে বাড়ি আসার পর দিনই তার মৃত্যু হয়।

এই ১২ সদস্যের মধ্যে রয়েছেন বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনীর কর্ণধার তথা কুরুম্বা মুকুন্দলাল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, লাভপুর ব্লকের ধনডাঙ্গা জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষক কাজল মুখোপাধ্যায়, সিউড়ি ইউপি পাবলিক স্কুলের শিক্ষক দীপ মুখোপাধ্যায়, তুফানচন্দ্র কোনার, অন্বেষা ঘোষ, রুপা সুতার, অর্পিতা ঘোষ, মৃন্ময়ী মন্ডল, প্রিয়ব্রত চক্রবর্তী, কাজী মেহবুব ইসলাম, কাজী খাইরুল ইসলাম এবং প্রয়াত রথীন ভাণ্ডারীর পরিবর্তে যাচ্ছেন অভীক ব্যানার্জি।

নাট্য দলের অন্যতম মুখ তথা কর্ণধার উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বলেন ২০০৭ সালে প্রথম এই মানব পুতুল নাটক শুরু হয়। নাট্য শিক্ষক অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মিশর নাট্য উৎসবের কথা জানতে পারেন তারা। আর তারপর আবেদন ক্রমে কায়রো থেকে মিলেছে এমন আন্তর্জাতিক মঞ্চে মানব পুতুল নাটক মঞ্চস্থ করার সুযোগ। আর্থিক তেমন কোনো সমস্যা বাধা হবে না বলে জানিয়েছেন বীরভূম জেলা সমাহার্তা বিধান রায়। স্থানীয় লাভপুর বিধায়ক অভিজিৎ সিনহা এবং ভারতীয় বিদ্যাভবনের ডাইরেক্টর ডঃ জি.ভী. সুভ্রমণিয়াম সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, পুতুল নাচ প্রায় অবলুপ্তির পথে।

একদা বিশ্বে প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম অবদান ছিল পুতুল নাচ। গত শতাব্দীর আটের দশক পর্যন্ত পুতুল নাচের মাধ্যমে পৌরাণিক, সামাজিক কাহিনি বাংলার গ্রামে গঞ্জের মেলায় তাবু খাটিয়ে দেখানো হত। বর্তমানে রাঢ়বঙ্গে এই পুতুল নাচ অবলুপ্ত প্রায়। তেমন সময়ে ২০০৭ সালে বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনীর নাট্যকার ও নির্দেশক ডঃ উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় এই অবলুপ্ত সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে তুলতে মানুষকে পুতুল হিসাবে ব্যবহার করে নতুন আঙ্গিকে শুরু করেন মানব পুতুল নাটক “বেহুলা লখিন্দর পালা”। ইতিমধ্যে ভারতবর্ষের ১৩ টি রাজ্যে ৪৫৬ বার এই নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। ভারত সরকারের পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র একে ইনভেটিভ আইডিয়া অফ ইন্ডিয়ান থিয়েটারের আখ্যা দিয়েছেন। ২০২৩ সালে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে ৪১৬ তম মঞ্চে এটি ট্রানসোসিয়ানা ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করে। বাংলা তথা ভারতের প্রাচীন এই লোকসংস্কৃতি এবং দর্শনকে তুলে ধরাই এই নাটকের মুখ্য উদ্দেশ্য।
