
উত্তম মণ্ডলঃ
হিসেবমতো কালীপুজো থেকে তিনটি দিন মন্দিরে থাকেন মা সিদ্ধেশ্বরী। এর মধ্যে কখনও ভাইফোঁটা পড়ে যায়, কখনও আবার পড়ে না। যেমন, এই ২০২৪-এ পড়লো না। কিন্তু মা ফোঁটা নিয়ে তবেই গেলেন বিসর্জনে।
খ্রিস্টিয় চতুর্দশ শতাব্দীতে জেলার বীরভূমের প্রান্তিক অঞ্চল রাজনগরে রাজত্ব করতেন জনগণের কাছে বীরত্বের জন্য খ্যাতকৃত্য রাজা বসন্ত চৌধুরী। রাজনগর মালীপাড়ায় তখন ছিলেন একজন তান্ত্রিক সন্ন্যাসী, লোকে তাঁকে “সিদ্ধেশ্বর তান্ত্রিক” নামেই জানতো। পাশ দিয়ে বয়ে যেতো নদী কুশকর্ণী। এখন সে নদী দূরে সরে গেছে। নদী তীরেই ছিল শ্মশান। আর তার ধারেই ছিল একটি বিরাট শিমুল গাছ। সে গাছে ছিল অজস্র চিল-শকুনের বাস। ঠিক এই জায়গাতেই সিদ্ধেশ্বর তান্ত্রিক শুরু করেন দেবী সিদ্ধেশ্বরীর পুজো। তান্ত্রিক সিদ্ধেশ্বর প্রতিষ্ঠিত বলে দেবীর নাম “সিদ্ধেশ্বরী।”
এরপর কালের নিয়মেই একদিন সিদ্ধেশ্বর তান্ত্রিকের জীবনাবসান হয়। বীররাজ বসন্ত চৌধুরী এরপর দেবীর সেবা-পুজোর জন্য বীরভূমের ইলামবাজার এলাকার দেবীপুর গ্রাম থেকে “চক্রবর্তী” উপাধিধারী পুরোহিত নিয়ে এসে জমিজমা দিয়ে বসান রাজনগরে। ব্রিটিশ আমলে অবশ্য তাঁদের সে সব জমিদারী চলে যায়। তবে সেই বংশের দেবদাস চক্রবর্তী, পূর্ণদাস চক্রবর্তী, শীতল চক্রবর্তীরা এখনো ভক্তদের সহায়তায় দেবীর পুজো করে আসছেন।
দেবী সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় জাগ্রতা দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিতা। মাটি দিয়ে মায়ের মূর্তি তৈরি করেন স্থানীয় শিল্পী। কালীপুজোর রাতে প্রচুর ভক্তের ভিড় হয় এখানে। এরপর তিনদিনের দিন হয় মায়ের বিসর্জন। গাড়িতে নয়, ভক্তদের কাঁধে চেপে মা যান গাঙমুড়ি গ্রামের পানিফলা পুকুরে।
এবার ভাইফোঁটা পড়েনি, এদিকে ভাইফোঁটার আগের দিন ২ নভেম্বর, ২০২৪, শনিবারের সন্ধ্যায় মাকে বিসর্জনে নিয়ে যেতে তৈরি সবাই। কিন্তু মা নড়লেন না। ভর এলো এক ভক্তের। জানা গেল, ভক্তের হাতে কপালে ফোঁটা নিয়ে তবেই তিনি বিসর্জনে যাবেন। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। ভক্তের হাতে কপালে চন্দনের ফোঁটা নিয়ে ভক্তদের কাঁধে চেপে তবেই তিনি গেলেন বিসর্জনে।