নেশাগ্রস্ত মানুষদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগঃ কুমকুমা সারণীতে বার্ষিক অনুষ্ঠান উদযাপন

সনাতন সৌঃ

রাজনগর ব্লকভুক্ত চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন কুমকুমা গ্রামে নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে এক বিঘা জায়গার উপর গড়ে উঠেছে নেশামুক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘সারণী’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। দীপা মাইতি ও গোপা ব্যানার্জী নামে ৭০ উর্দ্ধ দুই মহিলার তত্ত্বাবধানে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি এগিয়ে চলেছে একটি অলাভজনক নেশামুক্তির মানবিক প্রতিষ্ঠান ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। এই মানব কল্যাণ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৩ সালে বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রয়াত ডা. কৃষ্ণপদ সরকারের প্রতিষ্ঠিত ‘সারণী’ তার সুদীর্ঘ পথ চলার ইতিহাসে সমাজের দরিদ্র অসহায় মানুষের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে অক্লান্ত সাহায্য করার চেষ্টা করে চলেছে। কোনো সরকারি সাহায্য মেলেনি আজও। তবে সাধারণ মানুষের আর্থিক সহায়তায় গড়ে ওঠা এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি জেলাবাসীর নজর কেড়েছে। জেলা, ভিন জেলার নেশাগ্রস্তদের কাউন্সিলিং এবং চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এখানে রয়েছে বায়োক্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের উদ্যোগ। আর রয়েছে দাতব্য চিকিৎসালয়, চক্ষু অপারেশনের ব্যবস্থা। দুঃস্থ কচি-কাঁচা ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ও ছবি আঁকা-আঁকির ব্যবস্থাপনা। প্রসঙ্গত বলা যায়, এ বছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে দেবাশীষ মণ্ডল (১২) নামে এক ছাত্র শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ ছবি এঁকে সবার নজর কেড়েছে। এই স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানটি ২৬ জুন ৪৯তম বছরে পড়ল। এই পুণ্য দিনটিকে স্মরণ করেই এদিন সারণী প্রেক্ষাগৃহে উদযাপিত হলো বার্ষিক নানান অনুষ্ঠান। এই মহতী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজনগর ব্লকের বিডিও শুভদীপ পালিত ও পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুকুমার সাধু, সমাজসেবী সৌমিত্র সিংহ প্রমুখ। স্বাগত ভাষণ দেন সংস্থার সুপার ভাইজার শুভব্রত মাইতি। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, মানব কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে নেশাগ্রস্ত মানুষজনদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনে পুর্ণবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এই সংস্থা থেকে। এরজন্য সকলের সাহায্য ও সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি। গ্রামবাসীর পক্ষে ভাষণ দেন সম্পাদক কাজল মণ্ডল। শান্ত স্নিগ্ধ ও প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা এই সংস্থার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান রাজনগর বিডিও শুভদীপ মাইতি। পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুকুমার সাধু এই মহতী উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য যথাসাধ্য সাহায্য ও সহযোগিতা করবেন। সংস্থার কর্ণধার সম্পাদিকা দীপা মাইতি জানান, শিশু ও নারীদের কল্যাণ সাধনের জন্য এখানে স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও দুঃস্থ শিশুদের শিক্ষার জন্য একটি ফ্রি প্রাইমারী স্কুল গড়তে চান। এর জন্য নানান পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিশেষে সংস্থার সদস্য ও শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় নেশাগ্রস্ত মানুষদের সচেতন করতে শাওন চক্রবর্ত্তীর রচনায় ও নির্দেশনায় ‘ফিরে দেখা’ বিষয়ে একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *