
অনিতা মুখার্জী
‘থাকবো না ভাই থাকবে না কেউ, থাকবে না ভাই কিছু, সেই আনন্দে যাও রে চলে- কালের পিছু পিছু।’ অনন্ত মালাকার কালের কঠোর নিয়মে ৩০শে মার্চ ২০২২, বৃহস্পতিবার রাত্রি একটা পঞ্চান্ন মিনিটে বর্ধমানের একটি বেসরকারী হাসপাতালে অমৃত পথের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। বাড়ি বর্ধমান জেলার পালিটা গ্ৰামে হলেও তিনি বীরভূমের গর্ব। কীর্ণাহারে মনের মতো একটা বসত বাড়িতে স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ, মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনীদের নিয়ে বাস করতেন। তাঁর মধ্যে শিল্পসত্ত্বা ছিল বহুমাত্রায়, তাইতো তিনি শোলা দিয়ে এমন সব শিল্পকর্ম বানাতেন যা তাঁকে শিল্পগুরু উপাধিতে ভূষিত করেছে। তিনি ছিলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী। দেশে, বিদেশে তাঁর তৈরী শিল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। খুব বড় মাপের মানুষ হলেও তিনি ছিলেন মাটির মানুষ। কোনো গরিমা কোনোদিন তাঁকে স্পর্শ করেনি। মাটির কাছাকাছি মানুষের সঙ্গে মনভরে মেলামেশা করতেন। মৃত্যু ঈশ্বরের কল্যাণকামী একটা ব্যবস্থা। একদিন সকলকেই যেতে হবে। তবে যিনি চলে যান তিনি যেকোনো ভাবে আমাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকেন, আমাদের ভালোবাসেন, আগলে রাখেন, সমাজ হিতৈষণার কাজে লাগেন। তাঁর সান্নিধ্যে আর থাকতে পাবো না এই ভেবে মন কখনও ডুকরে কাঁদে, কখনও গুমরে গুমরে কাঁদে। অনন্তকাকুর জন্য আজ বীরভূমের বেশিরভাগ মানুষই কাঁদছেন। অনন্ত মালাকারের শূন্যস্থান পূরণ হবার নয়। সাহিত্য রচনায় তিনি সমধিক পারদর্শী ছিলেন। অনন্ত মালাকার অনন্তকাল ধরে আমাদের মনে ছিলেন, আছেন ও ভবিষ্যতেও থাকবেন। বিরাট মাপের মানুষকে নিয়ে লিখতে গেলে লেখা বিরাট হয়ে যাবে। তাই অনেক কিছু বাদ থেকে গেল। কাকু অমৃতের দেশে ভালো থাকুন।
