দেবীবরণে দক্ষিণ ভারতের আদলে মণ্ডপ সাঁইথিয়ায়

বিজয়কুমার দাসঃ

অধিকাংশ ছিন্নমূল মানুষের পাশাপাশি কিছু আদি বাসিন্দা নিয়ে গড়ে উঠেছিল সাঁইথিয়া নেতাজী পল্লী। সেই নেতাজী পল্লীর যুবক প্রতিনিধি উজ্জ্বল সরকার, সোনাই চট্টোপাধ্যায়, দেবাশিস সাহা, কমল দাস, দেবু দাস, করুণ দত্ত প্রমুখ যুবকেরা গড়ে তুলেছিল জয়তু সুভাষ গোষ্ঠী। শুরু হয়েছিল ১৯৭৭ সাল থেকে কালীপুজো দিয়ে। পরে এলাকার মানুষের ইচ্ছায় ১৯৮৮ সাল থেকে দুর্গাপুজো শুরু। প্রথমদিকে অনাড়ম্বর পুজো হলেও গত এক দশকে এই পুজো এখন মণ্ডপসজ্জায়, থিমে জেলার অন্যতম।আকর্ষণীয় পুজো। পাড়ার একটি ফাঁকা জায়গায় শুরু হলেও এখন নিজস্ব মণ্ডপ। তার ওপর সাঁইথিয়া বিধানসভার বিধায়ক নীলাবতী সাহা এখন এই পুজোর দায়িত্বশীল সংগঠক।
এই পুজোয় প্রতি বছরই মণ্ডপে প্রকৃতি ভাবনা বা পুরাণ ভাবনা প্রাধান্য পায়। বিগত বছরগুলিতে মহাভারত, ৫২ সতীপীঠ, নবদুর্গা, দশমহাবিদ্যা, শস্যদেবী দুর্গা, দুর্গা পটচিত্র ইত্যাদি ভাবনায় মণ্ডপ সাজিয়ে চমক দিয়েছে জয়তু সুভাষ গোষ্ঠী। এই পুজোর অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা দেবাশিস সাহা জানালেন, এবারের মণ্ডপেও থাকছে চমক। গড়ে তোলা হচ্ছে দক্ষিণ ভারতের আদলে কারুকার্যময় আকর্ষণীয় মণ্ডপ। এবার “দেবীবরণ” ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে “বোধন থেকে বিসর্জন” এর নানা বিধি ও দ্রব্যের সম্ভারের ছবি ও দ্রব্য সহযোগে পূজামণ্ডপ সাজানো হচ্ছে। কমিটির সদস্যরা জানালেন, দুর্গাপুজো যদিও চারদিনের কিন্তু দেবীর আবাহন পর্ব শুরু হয় দেবীর বোধন থেকে। তাঁরা মনে করেন, এখন মানুষের ব্যস্ততা, নাগরিক জীবনে আধুনিকতার কারণে “বোধন থেকে বিসর্জন” এর এইসব বিধি থেকে মানুষ সরে এসেছে। পুজো এখন যেন নিছক চারদিনের দেবীপুজো। কিন্তু শাস্ত্রে এই পুজোর নানা বিধি, নিয়মকানুনের কথা আছে। তাই “দেবীবরণ” ভাবনায় “বোধন থেকে বিসর্জন” এর মুহূর্তগুলি তুলে ধরা হচ্ছে জয়তু সুভাষ গোষ্ঠীর মণ্ডপে। মণ্ডপের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে তৈরি করা হচ্ছে দেবীপ্রতিমা। বিশেষ সাজে সাজানো হচ্ছে প্রতিমা। যাতে গুরুত্ব পায় বনেদিয়ানা। দক্ষিণ ভারতের আদলে গড়ে তোলা মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে থাকা মণ্ডপশিল্পী অভিজিৎ মণ্ডল, প্রবীণ সেনরা জানালেন, পুরাণ, বনেদিয়ানা, মণ্ডপভাস্কর্যে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবারের পুজোয়। এই পুজোয় বনেদিবাড়ির পুজোর আদলে কুমারীপুজো হয়ে থাকে নবমীর দিন। সেই পুজো দেখতে এলাকার সমস্ত মহিলা সহ অধিবাসীরা উপস্থিত থাকেন।ঘট আনয়ন ও ঘট বিসর্জনের শোভাযাত্রাতেও থাকছে অভিনবত্ব। এই পুজোর অন্যতম সংগঠক বিধায়ক নীলাবতী সাহা বললেন, মণ্ডপের পাশেই সাহা পরিবারের বধূ হয়ে আসার পর থেকেই জড়িয়ে আছি এই পুজোর সাথে। পুজো চারদিন এই পুজোমণ্ডপেই বেশি সময় কাটে। জয়তু সুভাষ গোষ্ঠীর সদস্যরা জানালেন, এবারের মণ্ডপভাবনায়, প্রতিমায়, দেবী আবাহনের আয়োজনে বনেদিয়ানাকেই প্রাধান্য দিয়েই মণ্ডপ ও প্রতিমা সাজানো হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *