শম্ভুনাথ সেনঃ
কত বছরের প্রাচীন এই দুর্গাপুজো তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেনি। বীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বেচারাম শিকদার, দেবাশিস চক্রবর্তীদের মত পরিবারের সদস্যদেরও তা অজানা। তবে জনশ্রুতি এই পুজো অন্তত ৫৫০ বছরের পুরোনো। বীরভূমের রাজনগর ব্লকের ভবানীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের “বেলেড়া” গ্রামে শিকদার পরিবারের পারিবারিক দুর্গাপুজো এখন সর্বজনীন রূপ নিয়েছে। প্রাচীন প্রথা মতো মায়ের ডাকের সাজে এক চালি মূর্তি, অন্য এক মনমোহিনী রূপ। সেই পুরোনো রীতি পরম্পরা মেনে প্রাচীন পুঁথির মন্ত্র পড়েই হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। আগে এখানে পঞ্চমুণ্ডীর আসন ছিল বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। সংলগ্ন ভবানীপুর, রাউতাড়া, গনেশপুর নতুনগ্রাম, কবিলাসপুর, কুন্ডিরা, রাণীগ্রাম, কাটাশোলা এমন সব গ্রামের মানুষ বছরভর অপেক্ষায় থাকেন বেলেড়া গ্রামের দুর্গোৎসবের জন্য। আগে ছিল মাটির মন্দিরে খড়ের চাল। পরে সেখানে টিনের চাল দিয়েই মন্দির তৈরি হয়। ২০০০ সালে রামচন্দ্র শিকদারের উদ্যোগে এখানে কংক্রিটের সুদৃশ্য মন্দির নির্মাণ হয়েছে। এবার এই দুর্গোৎসবে মায়ের মন্দির সাজানো হয়েছে রংবেরঙের ফুলে। মেদিনীপুর থেকে ফুলের মালিরা সাত দিন আগেই এসেছেন ব্যাঙ্গালোরের ফুল নিয়ে। এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য শত শত মানুষ মনস্কামনা পূরণের উদ্দেশ্যে মায়ের কাছে দন্ডী দেন। নবমীর দিনে প্রায় সারাদিন ধরেই হয় ছাগ বলি। অন্তত ২০০-২৫০ ছাগ বলি দেওয়া হয় বলে জানান গ্রামেরই এক জনৈক ভক্ত। এদিন বহু ভক্ত, পুণ্যার্থী, দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। এককালে শিকদার পরিবারের পুজো হলেও পরবর্তীতে উত্তরসূরি হিসেবে শরিকী চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যরাও এই মায়ের নিত্যসেবা চালান। বেলেড়ার মা ‘দুর্গা’ এখন সবার দুর্গতিনাশিনী “দুর্গা মা”।