অসহনীয় মৃত্যু মিছিল আর এক একান্ত ব্যক্তিগত উচ্চারণ….

সন্দীপন রায়ঃ

মৃত্যু!

হ্যাঁ, মৃত্যু এখন আর কোনও কঠিন শব্দ নয়। নয় শীতলতম শব্দ।

সমকালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আজ আর ভয় হয়না এই অন্ধকার শব্দের মুখোমুখি হতে। অতিরিক্ত ব্যবহারে তার কৌলিন্য হারিয়ে রোজ একটি সহজ থেকে সহজতর শব্দে পরিণত হচ্ছে, হয়েছে মৃত্যু।

এই মৃত্যুর সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎকারের আজ ২৯ বছর পূর্ণ হলো। নবম শ্রেণি সদ্য উত্তীর্ণ এক কিশোর তার পাশে সবেমাত্র চতুর্থ শ্রেণি উত্তীর্ণ বোন আর মাকে নিয়ে দেখেছিল তার বাবাকে সামান্য অসুস্থতার ফলশ্রুতিতে হঠাৎ করেই এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে। দেখেছিলাম সদ্য সন্তানহারা আমার বৃদ্ধা ঠাকুমার যন্ত্রণা। সেদিন বুঝেছিলাম কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে মৃত্যু, আর কি নিদারুণ তার পরিণাম। তারপর জীবন সংগ্রামের অনিবার্য বাধার পাহাড় অতিক্রম করতে করতে পথ চলতে চেষ্টা করেছি, করছি আজও।

তার পরেও কত কত আত্মজনের সঙ্গে ছিঁড়ে গেছে জীবনের বন্ধন। বিগত কয়েকদিনেও হারালাম প্রিয় কত স্বজনদের। কিন্তু, আজ? প্রতিনিয়ত নিকটজনের বিচ্ছেদ সংবাদ এখন সন্ধ্যার পরে রাত্রির মতোই খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। অনিশ্চয়তার ইট, আশঙ্কা আর উদ্বেগের বালি মশলায় নির্মিত এই সমকালে ভয় নয়, এক উত্তরহীন অসহায়তা বোধ ক্রমশ গ্রাস করছে আমাকে, আমাদেরকে।

আমাদের চারপাশে এত এত বাতাস। হয়তো বা দূষিত তা। কিন্তু একটুকরো বাতাস যার পোশাকি নাম অক্সিজেন আজ মূল্যের বিনিময়েও পাওয়া সহজ নয়। এ কোন সকাল?

বিজ্ঞান, প্রযুক্তির অভূতপূর্ব অগ্রগতি সত্ত্বেও মানবজাতিকে এই অসহনীয় সংকটের অন্ধকারে টেনে এনে ফেলেছে যে প্রায় অদৃশ্য শত্রু ভাইরাস তাকে মোকাবিলায় এখনো তেমন সাফল্যের আলো খুঁজে পাচ্ছি কই?

তবুও তো আশাহত হলে চলে না। চলবেও না। জানি বিশ্বাস হারানো পাপ। মানুষের সমবেত প্রচেষ্টার উপর তাই এখনো আমরা আস্থা রাখি। মানুষই পারে, পারবে এই অভাবনীয় সংকট থেকে নিজেদের মুক্ত করতে। তবে আমাদের আত্মঘাতী পথ থেকে সরে আসতেই হবে। এমনিতেই এক অবর্ণনীয় তমশাঘন সময়ের মধ্যে দিয়ে এখন আমাদের পথ চলা। জীবন চূড়ান্ত অনিশ্চিত। তাই, নতুন করে আর আমরা কোনো ভাবেই আমাদের বর্তমানকে বিপন্ন করবো না। আগামীকে করবো না আরও কণ্টকাকীর্ণ। সমস্ত প্রকার রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক সংঘাত থেকে নিজেদের বিরত থাকতে হবে,থাকতেই হবে আমাদের। কারণ অনেক অনেক রক্ত খরচ হয়ে গেছে। আর রক্তক্ষরণ হলে আমরা বাঁচবো কীভাবে? সমকালকে রক্ষা করতে আসুন দলমত নির্বিশেষে আমরা আমাদের দেহের রক্তকে অন্যের জীবন পুনর্জীবিত করতে কাজে লাগাই। আর সংগঠিত উপায়ে আমরা সবাই লড়াই করলে অতিমারীর এই প্রাণঘাতী কুয়াশা কাটিয়ে নিশ্চিত ভাবে নতুন স্বপ্নের ভোর আমাদের সামনে মৃত্যুঞ্জয়ী হাসি হাসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *