নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
সাঁইথিয়া শহরে থিয়েটারচর্চায় দীর্ঘ ৩০ বছর পথচলার অক্লান্ত প্রতিষ্ঠান সাঁইথিয়া আসরনাট্যম। ৩০ বছরের পথচলায় আসরনাট্যম এর ঝুলিতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক নাটক প্রযোজনার দৃষ্টান্ত। সারা জেলা তথা রাজ্যের থিয়েটারের মানচিত্রে এই নাট্যদল তাই সুপরিচিত। সাঁইথিয়ার নাট্যচর্চার অন্যতম কর্ণধার বিজয়কুমার দাস প্রতিষ্ঠিত সাঁইথিয়া আসরনাট্যম ৩০ বছরে পা রেখে ২৮-৩০ জুন তিন সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির সহায়তায় আয়োজন করেছিল চিন্ময় সিনহা নাট্য আলোচনাচক্র ও নীহার- স্মৃতি নাট্য উৎসবের।
২৮ জুন সন্ধ্যায় সাঁইথিয়া কিডস হোমে দলের সভানেত্রী যূথিকা সিনহার সভাপতিত্বে উৎসবের উদবোধন পর্যায়ে উপস্থিত ছিলেন সাঁইথিয়া পুরসভার পুরপিতা বিপ্লব দত্ত, নাট্যসুজন দেবাশিস সাহা, পিনাকি দত্ত এবং জেলার দুই বিশিষ্ট নাট্যজন স্বপন রায় ও মলয় ঘোষ। বিশিষ্ট সমাজসেবী প্রয়াত নীহার দত্ত ও তাঁর প্রয়াত পত্নী স্মৃতিকণা দত্তর প্রতিকৃতিতে মাল্যার্পণের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা করে পুরপিতা বিপ্লব দত্ত বলেন, আসরনাট্যম দীর্ঘ কয়েক বছর থেকেই আমার প্রয়াত বাবা ও মায়ের স্মৃতিতে এই নাট্য উৎসব করে চলেছে। এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য শহরের নতুন প্রজন্মকে নাট্যমুখী করা। এমন উদ্যোগ অভিনন্দনযোগ্য। দলের সম্পাদক বিজয়কুমার দাস বলেন, আসরনাট্যম নাট্য নিবেদিত একটি প্রতিষ্ঠান। দলের নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরাই এই সংগঠনের প্রাণশক্তি। নাট্য উৎসবের সাফল্য কামনা করে বক্তব্য রাখেন দেবাশিস সাহা ও পিনাকি দত্ত। থিয়েটার চর্চায় আসরনাট্যম এর ভূমিকা নিয়ে তাঁরা গঠনমূলক বক্তব্য রাখেন। এই সন্ধ্যায় দ্বিতীয় পর্বে ” থিয়েটার চর্চায় নাট্যপত্রের ভূমিকা ” বিষয়ে চিন্ময় সিনহা স্মৃতি নাট্য আলোচনাচক্রে বক্তব্য রাখেন জেলায় চার দশক থেকে প্রকাশিত নিয়মিত নাট্যপত্র আননায়ুধ সম্পাদক স্বপন রায় এবং পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির সদস্য ও ইলোরা নাট্যপত্রের সম্পাদক মলয় ঘোষ। থিয়েটার নিয়ে প্রকাশিত নানা নাট্যপত্র সহ নাট্যপত্র প্রকাশের দায়বদ্ধতা নিয়ে আলোচনায় সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে আলোচনাচক্র। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শ্রীময়ী দাস। এই অন্তরঙ্গ আলোচনাচক্রে শ্রোতার আসনে ছিলেন শহরের বিশিষ্ট মানুষজন এবং শহরের বিভিন্ন নাট্যদলের নাট্যকর্মীরা।আলোচনাচক্রের শেষে শহরের বিভিন্ন নাট্যদলের কর্ণধার ও কর্মীরা প্রদীপ প্রজ্বলন করে উৎসবের জন্য শুভ কামনা জানান ২৯ জুন দ্বিতীয় সন্ধ্যায় ছিল দলের সদস্যা অদিতা কুণ্ডুর আবৃত্তি সহ তিনটি নাটক। এদিন ছিল মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রয়াণ দিবস। তাই উৎসব শুরু হয় আসরনাট্যম পরিবেশিত একক অণুনাটক ” আমি শ্রীমধুসূদন বলছি ” পরিবেশনার মাধ্যমে। নাটকটির রচনা,নির্দেশনা এবং অভিনয়ের দায়িত্বে ছিলেন বিজয়কুমার দাস। সমগ্র নাট্যে স্বল্প সময়ে কবি মধুসূদনের জীবনের রূপরেখা যেভাবে ফুটে উঠেছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। দ্বিতীয় নাটক ছিল কলকাতার আলিপুর অহনা পরিবেশিত “হারানো প্রাপ্তি” নাটক। হালকা হাসির এই নাটক শ্রোতাদের প্রশংসা অর্জন করেছে। এই সন্ধ্যার শেষ নাটক ছিল আসরনাট্যম পরিবেশিত বিজয়কুমার দাস রচিত ও নির্দেশিত “নিরুদ্দেশ ” নাটক। বর্তমান সময়ে বার্ধক্যের সমস্যা ও একাকীত্ব নিয়ে এ নাটক দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়। প্রিয়াঙ্কা সিনহা,সুজয় চৌধুরী,উত্তম মন্ডল,স্নেহাশিস দাস, পার্বতীরমণ ভট্টাচার্য ও বিজয়কুমার দাস অভিনয় করেন এই নাটকে।
৩০ জুন শেষ সন্ধ্যার শুরুতেই হাওড়া থিয়েটার ওয়ার্কার্স রেপার্টারি পরিবেশন করে দীপক নায়েক রচিত ও সৌরভ চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত “ইউ সি – টেন ” নাটক।নাটকের বিষয়বস্তু ছিল আকর্ষণীয়। এরপর পরিবেশিত হয় মহাশ্বেতা দেবীর কাহিনী অবলম্বনে টিঙ্কু মহান্ত অভিনীত ” ভাতের গন্ধ ” নাটক। এই উৎসবের শেষ নাটক ছিল আসরনাট্যম পরিবেশিত বাদল ধর রচিত ও সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত ” চিলেকোঠার ঘর ” নাটক। এক স্মৃতিভ্রষ্ট মানুষের জীবনের সঙ্কট নিয়ে রচিত এই নাটকে অভিনয় করেছেন, স্বাতী দাস,শ্রীময়ী দাস,সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়, সুজিত দাস, অন্বেশ চ্যাটার্জী,চন্দ্রনাথ মুখার্জী, বিজয়কুমার দাস প্রমুখ। এই সন্ধ্যায় নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করে সাঁইথিয়া পাড়ি থিয়েটার ও শিশুশিল্পী অনীক চৌধুরী। দলের পক্ষে তরুণ সদস্য – সদস্যা ধীরাজ মন্ডল, জীবানন্দ মণ্ডল,টিঙ্কু মহান্ত,প্রিয়াঙ্কা সিনহা,শ্রীময়ী দাস প্রমুখ জানালেন, সুস্থ সংস্কৃতির প্রসারে লক্ষ্যে অবিচল থেকে আসরনাট্যম তিন দশক অতিক্রম করল নাট্যচর্চায়।