নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় ও ভয়ঙ্কর স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। এটি একটি কাল্পনিক ত্রিভুজাকৃতি এলাকা যা উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। বহু বছর ধরেই এই অঞ্চলটি রহস্যজনকভাবে বিমান, জাহাজ এবং মানুষ নিখোঁজ হওয়ার জন্য কুখ্যাত।
অবস্থান ও পরিসীমা
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের তিনটি কোণ হল—
১. মিয়ামি (ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র),
২. বারমুডা দ্বীপপুঞ্জ এবং
৩. সান হুয়ান (পুয়ের্তো রিকো)।
এই তিনটি স্থানের মধ্যে একটি কাল্পনিক রেখা টেনে যে ত্রিভুজ গঠন হয়, তাকেই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বলা হয়। মোটামুটি প্রায় ৫ লাখ বর্গমাইল জলের এই বিস্তীর্ণ অংশেই ঘটেছে বহু রহস্যময় ঘটনা।

রহস্যময় নিখোঁজের ঘটনা
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে ১৯৪৫ সালের ফ্লাইট ১৯ নিখোঁজ হওয়ার পর। পাঁচটি মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ মিশনে গিয়ে ট্রায়াঙ্গেলের মধ্যে হারিয়ে যায়। সেই বিমানের উদ্ধার অভিযানে পাঠানো আরও একটি বিমানও নিখোঁজ হয়ে যায়।
এছাড়াও বহু জাহাজ যেমন—
- USS Cyclops (1918) – ৩০০-র বেশি ক্রুসহ নিখোঁজ
- Marine Sulphur Queen (1963) – ৩৯ জনের মৃত্যু
- Ellen Austin – জাহাজ খালি হয়ে যাওয়ার কাহিনি
এইসব ঘটনাগুলি ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য আরও ঘনীভূত করে তুলেছে।
সম্ভাব্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
বহু বিজ্ঞানী ও গবেষক এই নিখোঁজ ঘটনাগুলির কিছু যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন—
১. চুম্বকীয় বিভ্রান্তি: পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের বিচ্যুতি এখানে কম্পাসকে বিভ্রান্ত করে।
২. মিথেন গ্যাস বিস্ফোরণ: সমুদ্রতলের তলদেশে মিথেন গ্যাস জমা হয়ে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, যা জাহাজ ডুবিয়ে দিতে সক্ষম।
৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগ: হঠাৎ ঝড়, টর্নেডো, গালফ স্ট্রীম-এর দ্রুত স্রোত জাহাজ বা বিমানের গতিপথ পরিবর্তন করে।
৪. মানবিক ভুল: নাবিক বা পাইলটের দিকভ্রান্তি, অভিজ্ঞতার অভাব বা যান্ত্রিক ত্রুটি।
অলৌকিক বিশ্বাস ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
অনেকের মতে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল হচ্ছে:
- ভিনগ্রহের প্রাণীদের ঘাঁটি, অথবা
- আটলান্টিস সভ্যতার ধ্বংসাবশেষের ওপর অবস্থিত,
- কেউ বলেন এটি একটি টাইম-ওয়ার্প জোন, যেখানে স্থান-কাল বিকৃত হয়ে যায়।
এসব অলৌকিক বিশ্বাস জনসাধারণের কল্পনাকে উসকে দিলেও তাদের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক ও সামরিক যান চলাচল আগের মতোই হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি, জিপিএস, রাডার ইত্যাদির উন্নয়নের ফলে এখন অনেক দুর্ঘটনা সহজেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছে। যদিও নিখোঁজের সংখ্যা কমেছে, তবু বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল তার রহস্যময়তা ধরে রেখেছে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল একাধারে রহস্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস এবং কল্পনার মিশেল। হয়তো একদিন সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মিলবে, অথবা হয়তো এই অঞ্চল চিরকালই মানুষের কৌতূহলকে জাগিয়ে রাখবে তার অমীমাংসিত রহস্যে।