নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশের নিচে এমন একটি স্থান রয়েছে, যা আজও মানুষের কাছে রহস্যে পরিপূর্ণ—এটি হল ম্যারিয়ানা খাত (Mariana Trench)। এই খাতটি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর সমুদ্রীয় খাদ। এটি প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম দিকে, ফিলিপাইনের পূর্ব উপকূল এবং গুয়ামের দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত।
ভৌগোলিক অবস্থান ও গভীরতা
ম্যারিয়ানা খাতের সর্বাধিক গভীর বিন্দুটি পরিচিত চ্যালেঞ্জার গভীর (Challenger Deep) নামে। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ১০,৯৮৪ মিটার (৩৬,০৩৭ ফুট) গভীর। তুলনামূলকভাবে বলা যায়, মাউন্ট এভারেস্টকে যদি উল্টো করে ম্যারিয়ানা খাতে স্থাপন করা হয়, তাহলেও তার চূড়া জলের নিচে থাকবে।

গঠন ও বৈশিষ্ট্য
ম্যারিয়ানা খাত একটি উপসমুদ্র তলদেশীয় খাদ (subduction trench)। এটি গঠিত হয়েছে যখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত (Pacific Plate) ফিলিপাইন সাগরীয় পাতের (Philippine Sea Plate) নিচে সরে যায়। এর ফলে খাতের সৃষ্টি হয় এবং এই গঠন চলতে থাকে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে।
জীববৈচিত্র্য ও রহস্যময় প্রাণী
অত্যন্ত চাপে, অন্ধকার ও শীতল পরিবেশে থাকা সত্ত্বেও, বিজ্ঞানীরা ম্যারিয়ানা খাতে বিভিন্ন অদ্ভুত ও রহস্যময় সামুদ্রিক প্রাণীর সন্ধান পেয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ—
- স্বচ্ছ দেহযুক্ত মাছ
- জীবাণুর মতো মাইক্রোবায়াল (Microbial) জীবন
- বায়োলুমিনেসেন্ট (Bio-luminescent) (আলো ছড়ানো) প্রাণী
এসব প্রাণীরা আমাদের পৃথিবীর অজানা জীববৈচিত্র্য ও অভিযোজন ক্ষমতা সম্পর্কে নতুন তথ্য দিচ্ছে।

মানব অভিযান
ম্যারিয়ানা খাতে প্রথম মানুষের অভিযান হয় ১৯৬০ সালে, যখন সুইস বিজ্ঞানী জ্যাক পিকার্ড ও মার্কিন নৌ-অফিসার ডন ওয়ালশ একটি বিশেষ ডুবোযান “ট্রায়েস্ট” (Trieste) ব্যবহার করে চ্যালেঞ্জার গভীরে পৌঁছান।
এরপর ২০১২ সালে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক জেমস ক্যামেরন এককভাবে খাতে ডাইভ করে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেন।

বিজ্ঞান ও ভবিষ্যৎ গবেষণা
ম্যারিয়ানা খাত শুধুমাত্র একটি ভূতাত্ত্বিক বিস্ময় নয়, এটি ভবিষ্যৎ গবেষণার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর নিচের জৈব-রাসায়নিক উপাদান, অজানা প্রাণীজগৎ এবং চরম পরিবেশে জীবনের অস্তিত্ব আমাদের জীবনের উৎপত্তি এবং অন্যান্য গ্রহে জীবনের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
ম্যারিয়ানা খাত হলো এক অনন্য প্রাকৃতিক বিস্ময়। আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই গভীরতম খাদ থেকে আমরা আরও নতুন তথ্য, রহস্য ও চমকপ্রদ আবিষ্কার পাবো। এটি পৃথিবীর অজানা ভূগর্ভস্থ জগতের এক প্রবেশদ্বার।
