নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
ভারতের সীমান্ত ছুঁয়ে তিব্বতের ভিতরে অবস্থিত একটি পর্বতশৃঙ্গ — মাউন্ট কৈলাশ — যা শুধু হিমালয়ের একটি গৌরবময় অংশ নয় বরং হাজার হাজার বছর ধরে ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা এবং রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং বন ধর্মের কাছে এটি একটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান। কিন্তু বিজ্ঞানীদের কাছেও এই পাহাড়টি একটি অমীমাংসিত রহস্য।
অবস্থান ও প্রাচীন ইতিহাস
মাউন্ট কৈলাশ অবস্থিত তিব্বতের নাগত্সে অঞ্চলে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬৬০০ মিটার উচ্চতায়। পাশেই রয়েছে মানস সরোবর এবং রাক্ষসতাল — দুটি হ্রদ, যা হিন্দু পুরাণে দেবতা ও অসুরদের বাসস্থান হিসেবে চিহ্নিত।
হিন্দু ধর্মে, কৈলাশ পর্বতকে বলা হয় “ভগবান শিবের বাসস্থান”।
বৌদ্ধ ধর্মে, একে মনে করা হয় বৌদ্ধ গুরু পদ্মসম্ভবের স্থান।
জৈন ধর্মে, এটি সেই স্থান যেখানে প্রথম তীর্থঙ্কর ঋষভদেব মোক্ষ লাভ করেন।

কেন এই পর্বতকে রহস্যময় বলা হয়?
১. কেউ কখনও শৃঙ্গারোহণ করতে পারেনি
বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করা সম্ভব হলেও, আজ পর্যন্ত কেউ কখনও মাউন্ট কৈলাশ জয় করতে পারেনি। এমনকি বহু বিখ্যাত পর্বতারোহী যেমন রাইনহোল্ড মেসনার এবং রাশিয়ার অভিযাত্রী দল চেষ্টা করেও এই পাহাড়ে উঠতে সাহস পাননি।
২. চৌম্বকীয় শক্তির অদ্ভুত আচরণ
অনেক ভ্রমণকারী দাবি করেন যে কৈলাশের আশেপাশে কম্পাস কাজ করে না এবং অনেক সময় ঘড়ির কাঁটা ঘুরে যায় উল্টো দিকে। বিজ্ঞানীরা একে বলে “Strong electromagnetic radiation field” যা আজও অজানা।
৩. বয়ঃক্রম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে?
অনেকে বলেন, কৈলাশ পর্বতের চারপাশে পরিক্রমা করলে মানুষের চুল দ্রুত পেকে যায়, নখ বড় হয়ে যায় — যেন সময় এখানে দ্রুত চলে!
কৈলাশের হিমালয় ট্রায়াঙ্গল: UFO ও এলিয়েন সংযোগ?
রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা এই অঞ্চলকে “The axis mundi” বা পৃথিবীর কেন্দ্রীয় অক্ষ বলে চিহ্নিত করেছেন। অনেক UFO গবেষক দাবি করেন, কৈলাশের নিচে কোনও গুহায় প্রাচীন এলিয়েন সভ্যতার চিহ্ন রয়েছে।

পরিক্রমা ও ধর্মীয় বিশ্বাস
হিন্দু ও বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীরা কৈলাশ পর্বতের চারদিকে ৫২ কিলোমিটার পরিক্রমা (পারিক্রমা) করেন। বিশ্বাস, একবার এই পারিক্রমা করলে পাপমুক্তি ঘটে, আর ১০৮ বার করলে মোক্ষ লাভ সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ বনাম আধ্যাত্মিকতা
একদিকে বিজ্ঞানীরা খুঁজছেন কৈলাশের ভৌগোলিক গঠন, চৌম্বক ক্ষেত্র ও সম্ভাব্য গুহার ভেতরের রহস্য। অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত আজও বিশ্বাস করেন — কৈলাশ কোনও সাধারণ পাহাড় নয়, এটি এক “দেবত্বের স্তম্ভ”।
মাউন্ট কৈলাশ এক অবর্ণনীয় মিশ্রণ — ধর্ম, বিজ্ঞান, প্রকৃতি ও রহস্যের। হয়তো একদিন আধুনিক বিজ্ঞান এর অনেক রহস্যের সমাধান করবে, কিন্তু ততদিন পর্যন্ত কৈলাশ থাকবে মানব সভ্যতার বিস্ময় হিসেবে।