শম্ভুনাথ সেনঃ
পঞ্চপীঠের বীরভূম। বক্রেশ্বর, নলহাটি, সাঁইথিয়া, লাভপুর, কঙ্কালীতলায় রয়েছে ৫-৫ টি সতীপীঠ। এছাড়া সাধক বামাক্ষ্যাপার সাধনক্ষেত্র “তারাপীঠ” জেলায় সিদ্ধপীঠ হিসেবে চিহ্নিত। বড় পবিত্র ভূমি এই বীরভূম। এই মাটিতেই জন্মেছিলেন কেন্দুলীতে “কবি জয়দেব”, নানুরে “চন্ডীদাস”, বীরচন্দ্রপুরে “নিত্যানন্দ প্রভু”। বহু কবি-সাহিত্যিকে, বাউল-ফকিরের জন্মভূমি এই রাঙামাটি। বীরভূম জেলা জুড়ে রয়েছে নানা “পর্যটনক্ষেত্র”। আর তাইতো হেতমপুরের গীতিকার আশানন্দন চট্টরাজ লিখেছিলেন– “দেশ-বিদেশের মানুষ গো যাও… এ বীরভূম ঘুরে”! আর বাউল সম্রাট পূর্ণদাস তাঁর সুরেলা কন্ঠে আকুতি জানিয়েছেন পর্যটকদের বীরভূমে আসার জন্য।আসলে বীরভূমের মাটিটাই আলাদা। আর এই মাটিতেই ধর্মীয় পর্যটন মানচিত্রে একটি নতুন নাম সংযোজিত হয়েছে ‘চৈতন্যপুর’- “গীতাভবন”। খয়রাশোল ব্লকের পাঁচড়া গ্রামে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে আড়াই বিঘা জায়গার উপর শ্রীমদ্ভাগবত গীতার অমৃত বাণী প্রচারের লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে “শ্রীমদ্ভাগবত গীতা মন্দির”। ৩৬৫ দিন চলে “বাসুদেবের” নিত্যসেবা! শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মের ৫০০ বছর পূর্তিতে, ১৩৯৩ বঙ্গাব্দের জন্মাষ্টমী তিথিতে এই “গীতাভবন” প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা স্বামী সত্যানন্দ মহারাজ। প্রতি বছর গীতাভবনে জন্মাষ্টমী তিথিতে সমাবর্তন উৎসব, ২৬ মাঘ থেকে ৫ দিনের পার্থসারথি মেলা, রথযাত্রায় অন্নকূট উৎসব, ১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনটি যুবদিবস হিসেবে উদযাপন, পয়লা জানুয়ারি কল্পতরু উৎসব, দোল, রথযাত্রা, বিজয়া দশমীতে দশেরা উৎসব এমন বারো মাসে তেরো উৎসব অনুষ্ঠিত হয় গীতাভবনে। দৈনিক অন্তত ১০০ জন ভক্ত প্রসাদ গ্রহণ করেন। বছরে অন্তত এক লক্ষ ভক্তের সেবার আয়োজন হয় আশ্রমের নানা অনুষ্ঠানে। ১৩৯৪ সাল থেকে আশ্রমে চলছে “অখণ্ড হরিনাম” সংকীর্তন। এখানে গড়ে উঠেছে হোমিও চিকিৎসাকেন্দ্র, পাঞ্চজন্য গ্রন্থাগার, উৎসব-অনুষ্ঠানের জন্য “পার্থসারথি মঞ্চ”। সম্প্রতি এই গীতাভবনে ভক্ত সেবার নিমিত্তে গড়ে উঠছে “প্রসাদ শিবির”! এ আশ্রমে সব কাজে ১৮ সংখ্যাটি সম্পৃক্ত! মহাভারতের ১৮ পর্ব, গীতার ১৮ অধ্যায়—১৮ শক্তি নিয়ে এখানে ঘরের সংখ্যা, পরিমাপ, ছাদের উচ্চতা, পিলারের দৈর্ঘ্য, পিলারের সংখ্যা সবেতেই ১৮ বর্তমান। শিলান্যাস যেমন ১৮ তারিখে তেমনি উদ্বোধন হয় একই তারিখ। মূলতঃ ভক্তদের দানে এই আশ্রম এগিয়ে চলেছে বলে জানিয়েছেন, আশ্রমের অধ্যক্ষ-প্রতিষ্ঠাতা স্বামী সত্যানন্দ মহারাজ। আজ ৪জুলাই এই আষাঢ় মাসে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসবের চতুর্থ দিনে এখানে অনুষ্ঠিত হয় “অন্নকূট উৎসব”। জগন্নাথ দেবের কাছে ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হয়। পরে ভক্তদের মধ্যে তা বিলি করা হয়। ভক্ত-পূণ্যার্থীরা এই “অন্নকূট উৎসবে” সকাল থেকেই সমবেত হন পর্যটনক্ষেত্র গীতাভবনে। সারাদিন ধরেই চলে নাম সংকীর্তন, আলোচনা।