
সেখ রিয়াজুদ্দিনঃ
২১ বছরের সন্তানসম্ভবা পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের আরগুণ গ্রামের বাসিন্দা সেমি খাতুন। রক্তাল্পতা সমস্যা জনিত কারণে বর্ধমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিন্তু সমস্যা যে কারণে রক্তাল্পতায় রক্ত পাওয়া নিয়ে। যেটা হচ্ছে আবার বিরলতম ও এইচ এর বাহক হওয়ার কারণে। আর সেই কারণেই বর্ধমান থেকে কলকাতা এন আর এস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় গর্ভবতী মহিলাকে। উক্ত গ্রুপের রক্ত সংগ্রহ করা নিয়ে রোগীর পরিবারের লোকজন পড়েন মহা সমস্যায়। বীরভূম ভলেন্টারি ব্লাড ডোনার্স এসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক নুরুল হক জানান, বিষয়টি কানে আসতেই তড়িঘড়ি কেতুগ্রাম এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশু কল্যাণ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ সবুজ বিবির সঙ্গে যোগাযোগ করি। উনিও খবরটা শুনে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বটা নিজ কাঁধে তুলে নেন। এন আর এস হাসপাতালে গিয়ে রোগীর তদবির করতে নেমে পড়েন। এদিকে হাসপাতাল সূত্রে খবর গর্ভবতী মায়ের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৩ এর কাছাকাছি নেমে গেছে, যা আশঙ্কাজনক। অন্যদিকে অতি বিরল প্রজাতি বম্বে গ্রুপের রক্তের সন্ধান চলতে থাকে এই গ্রুপের রক্ত পাওয়া খুব দুষ্কর এই প্রজাতির রক্তের বাহক রাজ্যে ৮০ জনের মত রয়েছে বলে স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য। আপাতত রোগীর জন্য কলকাতার দুটি ব্লাড ব্যাংক ও ঘাটাল থেকে এক ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করে চালানো হয়। কিন্তু তখনও পর্যন্ত দুই ইউনিট রক্তের খুবই প্রয়োজন দেখা দেয়। সেই অবস্থায় বীরভূমের বোম্বে গ্রুপের এক রক্তদাতার সাথে যোগাযোগ করেন নুরুল হক। যিনি পেশায় ট্রাকটার চালক তবুও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কাজ বন্ধ দেখে রাত্রেই ছুটে যান কলকাতার উদ্দেশ্যে। কলকাতা ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দীপঙ্কর মিত্র বলেন নিজের অর্থ উপার্জনের সম্বল তথা রোজগার বন্ধ দেখে সাহায্য করতে আসা মহান যুবকের অপেক্ষায় ছিলাম হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য। যুবক সঠিক সময়ে এসে রাতেই হাসপাতালে গিয়ে রক্তদান করে। যদিও রোগী অচেনা অজানা শুধু বিরলতম রক্তের তাগিদে তার এখানে ছুটে আসা। বীরভূম থেকে রক্ত দিতে যাওয়া যুবকের বক্তব্য- আমার রক্তে যদি কারো জীবন বাঁচে, তার জন্য আমার কোন ক্লান্তি নেই। এটাই আনন্দ, এটাই প্রাপ্তি, মানুষের ভালবাসা ও আশীর্বাদ কাম্য।
