নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
জগত মুখার্জি পার্ক দুর্গাপূুজো ২০২৫: “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—আশীর্বাদ না অভিশাপ?”
উত্তর কলকাতার এক অনন্য ভাবনামূলক থিম
২০২৫ সালে জগত মুখার্জি পার্ক দুর্গাপুজো এমন এক প্রশ্ন সামনে এনেছে যা আজকের সমাজে বিশেষ প্রাসঙ্গিক—AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ? এই প্যান্ডেলটি শিল্প, প্রযুক্তি ও আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধনে এক অভিনব অভিজ্ঞতা উপহার দিচ্ছে।
থিম ও প্যান্ডেল
- থিম শিল্পী সুবল পাল AI-এর সুবিধা ও বিপদের দিকগুলোকে শিল্পের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন।
- প্যান্ডেলটি এক ভবিষ্যতমুখী নগরীর রূপ নিয়েছে, যেখানে নীয়ন আলো, ধাতব নকশা, ডিজিটাল স্ক্রিন ও রোবটিক অবয়ব দেখা যাবে।
- ভেতরে ধর্মীয় প্রতীক ও আধুনিক প্রযুক্তির এক নান্দনিক সংমিশ্রণ তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিমা ও আধ্যাত্মিক বার্তা
- দুর্গা প্রতিমায় ঐতিহ্য ও প্রযুক্তির সংমিশ্রণ—দেবীর বর্ম ও অস্ত্রে ভবিষ্যতের ছোঁয়া, সন্তানদের রোবটিক ইঙ্গিত।
- অসুরকে উপস্থাপন করা হয়েছে “বিপথগামী AI” রূপে।
- পরিবেশবান্ধব রঙ ও উপকরণ ব্যবহার করে টেকসই বার্তাও দেওয়া হচ্ছে।
সাংস্কৃতিক ও জনসম্পৃক্ততা
- AI ও নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা, নাটক, নৃত্য ও সংগীতের আয়োজন।
- দর্শকদের জন্য ইন্টার্যাকটিভ প্রদর্শনী ও ডিজিটাল অভিজ্ঞতা জোন।
- ঐতিহ্যবাহী পুজো আচার যেমন পুষ্পাঞ্জলি, সিঁদুর খেলা ইত্যাদি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
প্রস্তুতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার
- শিল্পী, ভাস্কর, ইঞ্জিনিয়ার ও স্বেচ্ছাসেবীদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও সমন্বয়ে পুরো আয়োজন গড়ে উঠেছে।
- ভিআর, হোলোগ্রাম, প্রজেকশন ম্যাপিংসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে দর্শনীয় অভিজ্ঞতা তৈরিতে।
প্রতিক্রিয়া ও গুরুত্ব
- অনেকেই থিমটিকে যুগোপযোগী ও দূরদর্শী বলছেন, যদিও কিছু ঐতিহ্যপন্থী প্রযুক্তির সংমিশ্রণে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
- তবুও সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক—এটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
জগত মুখার্জি পার্কের ২০২৫-এর দুর্গাপুজো হলো পুরাণ ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনের এক সাহসী প্রয়াস। এখানে ধর্ম কেবল রীতি নয়—চিন্তার, প্রশ্নের ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রও।
এটি নিঃসন্দেহে ২০২৫ সালের কলকাতার দুর্গোৎসবের অন্যতম আলোচিত প্যান্ডেল।

দমদম পার্ক সার্বজনীন দুর্গাপুজো ২০২৫: হারানো স্মৃতির খোঁজে এক আবেগঘন যাত্রা
দমদম পার্ক সার্বজনীন দুর্গাপুজো ২০২৫ তার ৭৪ তম বছরে পা দিয়ে এবছর উপস্থাপন করছে আবেগঘন থিম—“হারায়ে খুঁজি”। উত্তর কলকাতার এই ঐতিহ্যবাহী পুজো কমিটি বহু বছর ধরে অভিনব চিন্তাধারা ও শৈল্পিক উপস্থাপনার জন্য পুজোপ্রেমীদের মনে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। এবারের থিম আমাদের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি, মূল্যবোধ ও অতীতের আবেগকে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার এক স্নিগ্ধ যাত্রা।
থিমের ভাবনা
আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা ও প্রযুক্তিনির্ভর দৌড়ের মাঝে আমরা প্রায়ই হারিয়ে ফেলি শৈশবের সরলতা, পারিবারিক সম্পর্কের উষ্ণতা এবং অতীতের আবেগময় মুহূর্তগুলো। “হারায়ে খুঁজি” সেইসব হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি ও স্মৃতির খোঁজে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে পুরনো দিনের আবহে, যেখানে জীবন ছিল সহজ-সরল কিন্তু গভীরভাবে সংবেদনশীল।
প্যান্ডেল ও প্রতিমা
এই থিমকে জীবন্ত করে তুলতে প্যান্ডেলকে সাজানো হয়েছে স্মৃতির গলিপথের মতো করে। এখানে দেখা যাবে গ্রামীণ পরিবেশ, পুরনো কলকাতার দৃশ্য ও ঐতিহ্যের নানা ছোঁয়া। প্রতিমা গড়া হয়েছে ঐতিহ্যবাহী শৈলীতে, যা দর্শকদের মনে জাগিয়ে তুলবে একদিকে ভক্তিভাব, অন্যদিকে গভীর নস্টালজিয়া।
আলোকসজ্জা ও পরিবেশ
প্যান্ডেল জুড়ে উষ্ণ আলো, ছায়ার খেলা এবং সুমধুর সঙ্গীতের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে এক আবেগঘন পরিবেশ। সন্ধ্যাবেলায় আলোকসজ্জা এই থিমকে আরও স্পষ্ট করে তোলে, যেন দর্শনার্থীরা সত্যিই হারিয়ে যাওয়া সময়ের মধ্যে ফিরে যাচ্ছেন।
ঐতিহ্যের ৭৪ বছর
দমদম পার্ক সার্বজনীনের দুর্গাপূজা কেবলমাত্র এক সাংস্কৃতিক উৎসব নয়—এটি সামাজিক বন্ধনেরও প্রতীক। ৭৪ বছরের ঐতিহ্য ও মানুষের ভালোবাসা এই পুজোকে করেছে বিশেষ। প্রতি বছর হাজারো দর্শনার্থী এখানে আসেন শুধু শিল্প ও সাজসজ্জা উপভোগ করতে নয়, বরং অনুভব করতে এক আন্তরিক আবহ।
“হারায়ে খুঁজি” থিমের মাধ্যমে দমদম পার্ক সার্বজনীন দুর্গাপুজো ২০২৫ আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে—উৎসবের আসল আনন্দ কেবল জাঁকজমকে নয়, লুকিয়ে থাকে আবেগ, স্মৃতি ও মূল্যবোধের পুনরাবিষ্কারে। এটি যেন এক আবেগময় সেতু, যা অতীত ও বর্তমানকে সুন্দরভাবে যুক্ত করে।
