নির্জনে পূজিতা শতাব্দী প্রাচীন রাজনগরের দক্ষিণাকালী

উত্তম মণ্ডলঃ

রাজনগর থানার নাকাশ গ্রামের কাছে নির্জনে ভক্তদের হাতে পূজিতা হলেন শতাব্দী প্রাচীন মা দক্ষিণাকালী। মা এখানে শিলামূর্তিতে বিরাজিতা। আগে মন্দির ছিল না। কয়েক বছর আগে স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ী প্রয়াত শ্রীদাম গঁরাই মায়ের সুদৃশ্য মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছেন। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে ভক্তরা নিজেরাই এসে মায়ের পুজো দিয়ে যান নিজের মতো করে।
জানা যায়, ১২৪৪ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যারাজ প্রথম নরসিংহদেবের সঙ্গে এই এলাকাতেই যুদ্ধ হয়েছিল রাজনগরের শাসনকর্তা ফকর-উল-মুলুক করিমউদ্দিন ল্যাংঘ্রির। দু’পক্ষের ঘোরতর লড়াইয়ের পর নরসিংহদেবের দখলে আসে রাজনগর। নাকাশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভিত খননের সময় বেশ কিছু দীর্ঘদেহি নরকংকাল পাওয়া গিয়েছিল। এসব এই এলাকায় ঘটে যাওয়া যুদ্ধের প্রমাণ।
তারপর তিনি বহুদিন রাজনগর শাসন করে গেছেন। সে সময় শৈবক্ষেত্র বক্রেশ্বর ও দেওঘরের বৈদ্যনাথ শিবের মন্দির দুটিও তিনি নির্মাণ করে দেন। এই এলাকা দুটি তখন বীরভূমের রাজধানী রাজনগরের অধীনে ছিল। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহের পর তৎকালীন ব্রিটিশ শাসক বীরভূমের এক বৃহত্তর অংশকে কেটে নিয়ে বিহার রাজ্যের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে “সাঁওতাল পরগণা” জেলা গঠন করে। পরবর্তীকালে বিহার ভেঙে তৈরি হয় ঝাড়খণ্ড। তখন থেকেই দেওঘরের বৈদ্যনাথ শিব মন্দির ঝাড়খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত হয়।
প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণব নগেন্দ্রনাথ বসু বক্রেশ্বর শিবমন্দিরের গায়ে “নরসিংহ” কথাটি পাঠোদ্ধার করে গিয়েছেন। এই শিলালিপির তথ্য এবং বক্রেশ্বর ও দেওঘর দুটি শিবমন্দির উড়িষ্যা রীতিতে তৈরি, যা এই মন্দির দুটির নির্মাতা হিসেবে প্রথম নরসিংহদেবের কথাই মনে করিয়ে দেয়। রাজনগর দখল করে উড়িষ্যারাজ প্রথম নরসিংহদেব এখানে কালীদহ পুকুরের মাঝে একটি বিজয়স্তম্ভ নির্মাণ করেন।
যুদ্ধক্ষেত্র হবার কারণে বহুকাল এখানে কোনো জনবসতি গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে মানুষজন এখানে বসবাস করতে শুরু করেছেন। তবে দক্ষিণা কালীর মন্দির এখনো নির্জন। এই মন্দিরেই সাড়ম্বরে পূজিতা হলেন শতাব্দী প্রাচীন দেবী দক্ষিণা কালী। এ বছর এখানে এই পুজোকে কেন্দ্র করে দু’দিনের গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মন্দির দর্শনের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সী মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন মেলায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *