সেখ ওলি মহম্মদঃ
বর্তমান যুগে যে কোনো পুজো হোক না কেন এখন শুধু থিমের চমক দেখা যায়। দুর্গা পুজো, কালী পুজো, সরস্বতী পুজো সহ একাধিক পুজোয় এখন থিমের চমক। কিন্তু বীরভূম জেলার দুবরাজপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চ্যাটার্জিপাড়ার কালী পুজোয় কোনো থিম থাকে না। দুবরাজপুরে শতাধিক কালী পুজো হলেও চ্যাটার্জিপাড়ায় কালীপুজো একেবারে রীতি মেনেই প্রতিবছর হয়ে থাকে। এক কথায় বলা যায় চ্যাটার্জি পরিবারের এই পুজো। কিন্তু পাড়ার সকলেই এই পুজোয় অংশ নেন। চ্যাটার্জি পরিবারের এই পুজো প্রায় ২৫০ বছর প্রাচীন। এখানে তাল পাতার পুথি দেখে তন্ত্রমতে পুজো হয়। সাত পুরুষ ধরে করে আসছে এই কালী পুজো। বর্তমানে চ্যাটার্জি পরিবারের শতাধিক সদস্য ও পাড়ার ছেলেদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই পুজো হয়ে থাকে বলে জানান চ্যাটার্জি পরিবারের প্রবীণ সদস্য শান্তিরাম চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি কাজল চট্টোপাধ্যায় জানান, কৈলাস চট্টোপাধ্যায় এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। তখন এই জায়গাটা জঙ্গলে পরিণত ছিল। আগেকার দিনে অপশক্তির ব্যাপার ছিল তখন সেই অপশক্তি থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যদের রক্ষার জন্য এবং পাড়ার লোকেদের মঙ্গলের জন্য মা কালীর পুজোর সূচনা করেছিলেন। তখন থেকেই বংশ পরম্পরায় এই পুজো হয়ে আসছে। আগে এই মন্দির তালপাতায় ঘেরা ছিল। পরে আবার টিনের ছাউনি হল। তারপর দালান হয়। তিনি আরও জানান, কৈলাস চট্টোপাধ্যায় কালী পুজোর বিধি তালপাতার পুথিতে লিখে রেখে যান। তখন থেকেই ঐ পুথি দেখেই তন্ত্রমতে পুজো করা হয়। যে বেদীতে দেবী দুর্গার পুজো করা হয়, সেই বেদীতেই মা কালীর পুজো হয়। এখানে মা কালী খুবই জাগ্রত। মন্দিরের একপাশে মায়ের মূর্তি গড়া হয়। আমরা জানি, প্রতিটি জায়গায় সন্ধ্যেবেলায় সন্ধ্যা দেওয়া হয়। কিন্তু পুজোর দিন এখানে বৈকাল সাড়ে ৩ টে থেকে ৪ টের মধ্যে প্রদীপ জ্বালানো হয়। পুজোর দিন গোধূলি লগ্নে আমরা চ্যাটার্জি পরিবারের সদস্যরা এবং পাড়ার ভক্তরা স্নান করে এসে শুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। আমরা নিজেও জানি মা কখন বেদীতে উঠবেন। তখন ঢাকিরা ঢাক বাজাতে থাকে এবং আমরা শুধুমাত্র মাকে হাত লাগালেই মা স্বয়ং বেদীতে উঠে যান। তাছাড়াও পরদিন ধুমধামের সাথে বাদ্যযন্ত্র সহকারে মায়ের বিসর্জন দেওয়া হয়। পুরুলিয়া, রানিগঞ্জ, নবদ্বীপ থেকে ব্যান্ড পার্টি ডাকা হয়। পাশাপাশি ৩০০ বছর ধরে বংশপরস্পরায় ঢাক বাজিয়ে আসছেন পাঁড়ুইয়ের ঢাকিরা। তাঁরাও অংশ নেবেন এই পুজোয়। দুর্গাপুর থেকে নিয়ে আসা হয় আলোকসজ্জা। এখানের আলোকসজ্জায় প্রতিবছর চমক থাকে। এই পুজোর বাজেট আনুমানিক ২ লক্ষ টাকা।