সেখ রিয়াজুদ্দিনঃ
লুটের পঞ্চায়েত ভাঙ্গো, মানুষের পঞ্চায়েত গড়ো, এই স্লোগানকে সামনে রেখে রবিবার বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের যৌথ উদ্যোগে রাজনগরে একটি মহামিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সিপিআইএমের রাজনগর দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে স্থানীয় রাজনগর বাজার, বাসষ্ট্যান্ড, থানা সহ বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে এবং রাজনগর চৌরাস্তা মোড়ে একটি পথসভা করেন। পথসভায় সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন মন্ত্রী দেবলীনা হেমরম ও সিপিআইএম বীরভূম জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ সহ অন্যান্য নেতৃত্ব রাজ্যের তৃণমূল সরকার ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন একশো দিনের কাজ চালু করতে হবে। সিপিআইএম লড়াই সংগ্রাম করে ১০০ দিনের কাজ আদায় করেছিল সেই কাজ আজকে হারিয়ে যেতে বসেছে। রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি কটাক্ষ করে বলেন তাদের বাড়িতে বান্ডিল বান্ডিল টাকা থাকবে, খড়ের গাদায় টাকা ভরে রাখবে আর শ্রমিকরা সারাদিন কাজ করে ২০০ টাকাও মজুরি পাবে না সেটা মানা যাবে না। তৃণমূল নেতাদের এখন সবাই চোর চোর বলে ডাকছে। তৃণমূল নেতাদের নাম ধরে ডাকলে তারা সাড়া দেয় না, কিন্তু চোর বলে ডাকলে তারা পিছন ফিরে তাকায়। এরকম ভাবেই তৃণমূলকে কটাক্ষ করলেন প্রাক্তন মন্ত্রী দেবলীনা হেমরম। তিনি বলেন আমরা কারো দয়ার দান নিতে চাই না, আমরা নিজেদের অধিকার নিতে চাই। বিজেপি সরকার বলেছিল প্রতিটি মানুষের কাচা বাড়ি পাকা হবে কিন্তু তা হয়নি, এর কৈফিয়ত আমরা চাই। দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি তৃণমূল বিজেপি একসঙ্গে হেঁটে চলে বেড়ায়। তৃণমূল না থাকলে বিজেপি থাকবে না, বিজেপি না থাকলে তৃণমূল থাকবে না। ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি করছে বিজেপি। কিন্তু আমরা পশ্চিমবাংলার মানুষ সেটা হতে দেব না, যার যেটা ধর্ম সে মেনে চলবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন দিন দিন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলেছে। চাষিরা আলুর দাম পাচ্ছে না। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়েও বিজেপিকে বিঁধলেন সেইসাথে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও এক হাত নিলেন দেবলীনা। বললেন শুভেন্দু অধিকারীও এক বড় চোর। ওকে যাতে না ধরতে পারে সেজন্যই বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। ইডি সিবিআই যারা বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছে তাদের উচিত প্রতিটি চোরকে ধরা, সে চোর যে দলেরই হোক না কেন।
জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিততে পারবে না তৃণমূল বিজেপি, তারা ভয় পেয়েছে। সেই জন্যই অমিত শাহ বীরভূমে এসে পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা না বলে লোকসভা নির্বাচনে আসন জেতার কথা বলেছেন। বিজেপি গোটা দেশের সম্পদকে বিক্রি করে দিচ্ছে। দেশের ঐতিহ্য লালকেল্লা বিক্রি করেছে, ট্রেন বিক্রি করছে, এয়ারপোর্ট বিক্রি করছে, প্লাটফর্ম বিক্রি করছে। পুলিশের নিরপেক্ষতা বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন পুলিশ নিরপেক্ষভাবে ভূমিকা পালন করছে না। পুলিশ তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে। পুলিশের উচিত নিরপেক্ষভাবে ভূমিকা পালন করা। একই সাথে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করারও দাবি জানান জেলা সম্পাদক। পথসভা শেষ করার পর সিপিআইএম নেতৃত্ব পাঁচ দফা দাবি নিয়ে একটি প্রতিনিধি মূলক ডেপুটেশন দেন রাজনগর থানায়। পুলিশকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে, এলাকায় বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে, বালি পাচার রুখতে হবে, এসব দাবি নিয়ে বাম কংগ্রেস প্রতিনিধিরা রাজনগর থানায় স্মারকলিপি জমা দেন।
অন্যান্যদের মধ্যে এদিন উপস্থিত ছিলেন বীরভূম জেলা সিপিআইএম সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য শীতল বাউরী, জেলা সদস্য শুকদেব বাগদী, সিপিআইএম এরিয়া সম্পাদক উত্তম মিস্ত্রি, সামিউল আক্তার, কংগ্রেসের রাজনগর ব্লক সভাপতি বুদ্ধদেব দাস, সেখ সালেম, অঞ্চল সভাপতি বিবেক বাউরি, ফরোয়ার্ড ব্লকের পক্ষে ছিলেন রাজকুমার দাস, সনাতন ডোম সহ অন্যান্যরা।