খরায় জ্বলছে জেলা: আমন ধান চাষ অনিশ্চিত, চাষীদের মাথায় হাত

সনাতন সৌঃ

বেশ কয়েকদিন দিন আগে জেলায় বেশ কিছু অঞ্চলে ভালো ধরনের বৃষ্টি হয়েছিল। এই বৃষ্টি দেখে চাষীরা মনের আনন্দে অধিকাংশ জমিতে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করে ফেলেছে কিন্তু বিধি বাম! বর্তমানে এই কয়েকদিন যাবৎ অনাবৃষ্টির জেরে আবারও জেলাতে খরা দেখা দিয়েছে। জেলায় যেটুকু বৃষ্টি হয়েছিলো তার থেকে অনেক বেশী চড়া রোদের তাপে মাঠঘাট শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি নেই । জলের অভাবে এখনো ধান রোপণের কাজ শুরু করা যায় নি।বিশেষ করে অসেচ এলাকায় চাষীদের অবস্থা খুবই সঙ্গীন। এখন জেলাজুড়ে ভ্যাপসা গরম চলছে । প্রচন্ড রোদের তাপে মাঠঘাটে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত জলের অভাবে মাঠের ফসলও শুকিয়ে যাচ্ছে।তবে দক্ষিণবঙ্গে কবে নাগাদ বৃষ্টির পরিমাণ মাত্রা বাড়বে, সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না আবহাওয়া দপ্তর। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের আবহাওয়া অধিকর্তা গণেশ দাস সংবাদ মাধ্যমকে জানান যে, বঙ্গোপসাগর থেকে যে জলীয় বাষ্প ঢুকছে তা অনেক উপর দিয়ে যাওয়ার কারণে দক্ষিণবঙ্গে সেভাবে বর্ষার মেঘ তৈরি হচ্ছে না। বঙ্গোপসাগরে কোনো নিম্ন চাপ বা ঘুর্নাবর্ত না হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গে বেশি মাত্রায় বৃষ্টি হবে না। আপাতত আগামী চার- পাঁচ দিন বঙ্গোপসাগরে কোনো অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত দেখছেন না আবহাওয়াবিদরা।ফলে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি আরও বাড়বে।যদিও মৌসুমী অক্ষরেখা এখন পশ্চিমবঙ্গের উপকূল হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত আছে।আর কয়েকদিন পরেই দক্ষিণবঙ্গে কোনো কোনো অঞ্চলে বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে বড়জোর বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে। কৃষি মহল মনে করছে, আষাঢ় মাস প্রায় শেষ হতে চলল। খরা পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে চাষের অবস্থা খুবই খারাপ হবে। গত বছর খুব দেরিতে নামলা বর্ষা হয়েছিল। চাষের সময় পেছিয়ে যায়।জলের অভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বহু জমিতে চাষ হয় নি। এবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভারী বৃষ্টি না হলে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে চাষী মহল। চাষের দূরাবস্থা দেখে চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। রাজনগর ব্লকের হরিপুর গ্রামের চাষি দিলীপ কোনাই বলেন, আমাদের এলাকায় সেচের ব্যবস্থা নেই।সাবমার্সিবল নেই। বৃষ্টির জলের উপর নির্ভর করে চাষ করতে হয়। কয়েক বছর আগেও রথের দিন থেকে ধান পোঁতা শুরু হয়ে যেতো। এখন বর্ষা অনেক পিছিয়ে গিয়েছে।শ্রাবণ মাসেও বেশি মাত্রায় বৃষ্টি হচ্ছে না। সময়ে ধান পোঁতা হলে ফলন ভালো হতো। ধানের চারাগাছ অনেকটায় বড় হয়ে গিয়েছে। জলের অভাবে এখনও বহু জমিতে চাষ দেওয়া সম্ভব হয়নি।সিউড়ি এক নম্বর ব্লকের কেন্দুলী গ্রামের চাষি রবীন্দ্রনাথ সৌ বলেন,সারের দাম এবং বিদ্যুতের মাশুল অনেক বেড়ে গিয়েছে। শ্রমিকের মজুরীর দামও বেড়েছে। বৃষ্টি না হলে লাভ তো দূরের কথা, ঋণের বোঝা আরও বাড়বে। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে যে, জেলার নীচু এলাকায় অল্প জলে বেশ কিছু জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে। চাষ করার সময় এখনও পেরিয়ে যায় নি। আশা করি এর মধ্যে বৃষ্টি হবে। তাছাড়া কোন পরিস্থিতিতে কী চাষ করতে হয় তা চাষীরা ভালোভাবেই জানেন। তাই চাষে খুব বেশি সমস্যা বলে মনে হয় না। আগামী দিনে অল্প জলে কীভাবে চাষ করা যায় সেই পদ্ধতি প্রসঙ্গে চাষীদের সচেতন করতে হবে।।তবে নিরাশ হলে চলবে না।এব্যাপারে চাষীদের ধর্য্য ধরতে হবে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে কৃষি দপ্তর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *