চন্দ্রযান-৩ সফল উৎক্ষেপণে আরও এক নেপথ্যের কারিগর বীরভূমের সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়

সনাতন সৌঃ

চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান-৩ সফল উৎক্ষেপণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছেন জেলার আর এক ভূমিপুত্র খটঙ্গা পঞ্চায়েতের রাইপুর গ্রামের কৃতি সন্তান সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি চন্দ্রযান উৎক্ষেপণে কম্পিউটার অপারেশন ডিরেক্টর (মিশন সফটওয়্যার)হিসেবে কাজ করেছেন। প্রসঙ্গত বলা যায়, কলকাতার সল্টলেক টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে বি-টেক করা ইসরোর কৃতি বিঞ্জানী সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ইসরো:রিমোট সেন্সিং স্পেসক্র্যাক্ট মিশনে যুক্ত আছেন। গ্রামের লোক তাঁকে পিকু বলেই ডাকে। গ্রামের সেই সহজ সরল, সাধাসিধে ছেলেটি আজ দেশের গর্ব। ভূমিপুত্র সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের আকাশছোঁয়া এই কৃতিত্ব অর্জনে গর্বিত রাইপুর গ্রাম তথা বীরভূম জেলাবাসী। সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের এর পিতা দেবদাস চট্টোপাধ্যায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পদস্থ আধিকারিক ছিলেন। মা নন্দিনীদেবী যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার কাজে। কর্মক্ষেত্রে অবসর নেওয়ার পর তাঁরা বর্তমানে থাকেন কলকাতার নিউটাউনে‌‌। আর সৌম্যজিৎ সস্ত্রীক নিয়ে থাকে বেঙ্গালুরু শহরে। দেবদাসবাবুর পৈত্রিক বাড়ি রয়েছে সিউড়ী এক নম্বর ব্লকের ভান্ডীরবন ধামের কাছেই রাইপুর গ্রামে। মাসে অন্তত একবার দেবদাস বাবু পৈত্রিক বাড়িতে আসেন। সৌম্যজিৎও পুজোর সময় গ্রামের বাড়িতে ৫/৬ দিন থাকে এবং আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের সাথে আনন্দ করে। দেবদাসবাবু আরও জানান যে, শিক্ষা জীবন প্রথম শুরু হয় গ্রামের বাড়িতেই সৌম্যজিৎ এর হাতে খড়ি দিয়ে। বাবার চাকরির বদলীর সুবাদে চিত্তরঞ্জনে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। তারপর সে সল্টলেকে অরবিন্দ ইনস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে বি-টেক করেন। ইসরোর সর্বভারতীয় পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট করেন এবং ২০০৭ সালে বেঙ্গালুরুতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এর আগে তিনি মঙ্গলযান ও চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এই চন্দ্রযান-৩ সফল উৎক্ষেপণে সে যে কর্মকাণ্ড করেছেন তার জন্য দারুন অভিভূত হয়েছেন সৌম্যজিৎ এর পরিবার। সবচেয়ে ভরসা ও সাহস জুগিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী সুপর্ণাদেবী। নিউটাউনে সি ব্লকে বসে ছেলেকে নিরলস ভাবে আশির্বাদ ও শুভকামনা জানিয়েছেন তাঁর মা ও বাবা। তাঁরা জানিয়েছেন যে, এই অনুভূতি কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। গত কয়েকদিন ছেলের খাওয়া ও ঘুম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। চন্দ্রযানের সফল উৎক্ষেপণের পর ছেলে বাড়িতে ফোন করে কেঁদে ফেলেছিল‌। সে বলল, এটা গোটা বিশ্বের জয়। আমাদের দেশ আগামী দিনে আরও বড় কিছু করে দেখাবে। সৌম্যজিৎ এত দায়িত্ব অবশ্য একদিনে পায়নি। বড় আদরের পিকু যখন আদি বাড়ি রাইপুরে থাকতেন। তখন সেখানে রাতের অন্ধকারে আকাশের দিকে তাকিয়ে মা নন্দিনীদেবীকে একের এক প্রশ্ন করতেন গ্রহ নক্ষত্র সম্পর্কে। তাঁর বাবা ও মা ঘুনাক্ষরে জানতে পারেন নি যে ছেলে একজন বড় বিজ্ঞানী হবে।

জীবন সঙ্গীনীর সঙ্গে সৌমজিৎ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *