শম্ভুনাথ সেনঃ
সারা দেশের সঙ্গে বীরভূমের দুবরাজপুর পুরসভার উদ্যোগে আজ সাড়ম্বরে উদযাপিত হল “শিক্ষক দিবস”। উল্লেখ্য, ১৯৬২ সাল থেকে প্রতি বছর স্বাধীন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, দার্শনিক, অধ্যাপক, ভারতরত্ন ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনটি ভারতে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন হয়ে আসছে। ১৮৮৮ খ্রীষ্টাব্দের এমন এক ৫ সেপ্টেম্বর তামিলনাডুর তিরুট্টানিতে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিন উপলক্ষে দুবরাজপুর পৌরসভার উদ্যোগে পৌরসভাকক্ষে পালিত হল শিক্ষক দিবস। এই অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করেন দুবরাজপুর পৌরসভার পৌরপ্রধান পীযূষ পান্ডে। মুখকথা পরিবেশন করেন উপ পৌরপ্রধান মির্জা সৌকত আলী। গৌরবময় অতিথি রূপে উপস্থিত ছিলেন দুবরাজপুর শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমের শীর্ষসেবক স্বামী সত্যশিবানন্দ মহারাজ, দুবরাজপুর পৌরসভার নির্বাহী আধিকারিক দেবাশিষ পাত্র, দুবরাজপুর ব্লক যুব কল্যাণ আধিকারিক অনিন্দ্য দুয়ারী, বীরভূম জেলার সরকারী আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায়, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক চন্ডীদাস দত্ত, তপন কুমার ওঝা সহ অন্যান্য কাউন্সিলরগণ। এদিন পুর এলাকার ৮৬ জন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক কৃতী পড়ুয়াদের হাতে শংসাপত্র সহ রৌপ্য পদক প্রদান করা হয়। তাছাড়াও ১৬ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষিকাকে দেওয়া হয় স্মারক সংবর্ধনা। পাশাপাশি এবার ইন্ডিয়ান এডুকেশন অ্যাওয়ার্ড প্রাপক শিক্ষক আরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রিন্সিপাল সৈয়দ নাসাকেও সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, দুবরাজপুর পৌরসভা ২০০০ সাল প্রতিবছর এই ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালন করে আসছে বলে পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে জানান।
এদিকে আজ সন্ধ্যায় দুবরাজপুর নেপাল মজুমদার ভবনে স্থানীয় সঙ্গীত শিক্ষক প্রবীর চৌধুরী ও রুনা চৌধুরীর উদ্যোগে “ত্রিসপ্তক” সংগীত মহাবিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মহা সমারোহে উদযাপিত হয় শিক্ষক দিবস। প্রথমেই ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণনের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন এবং অধ্যাপক ডঃ রবিন ঘোষের হাত ছুঁয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তবলা লহরা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে মহাবিদ্যালয়ের খুদে শিল্পীরা।
এছাড়াও বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তের ন্যায় ৫ সেপ্টেম্বর সাঁইথিয়া টাউন হাই স্কুলেও শিক্ষক দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হল কৃতি সম্বর্ধনা ও প্রবীণ প্রাক্তন শিক্ষক সম্বর্ধনা। প্রথম পর্বে কৃতি সম্বর্ধনা পর্বে মধ্যমণি ছিলেন প্রবীণ প্রাক্তন শিক্ষক চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায় সহ প্রবীণ শিক্ষক অশোক দে ও প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের হাত ছুঁয়ে পুরস্কার পৌঁছে গেল বিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্রদের হাতে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৌমেন ব্যানার্জী তাঁর বক্তব্যে বললেন, বিদ্যালয়ের শুভানুধ্যায়ী প্রয়াত মদন মোহন ঘোষের স্মৃতিতে তাঁর পরিবারের পক্ষে এই পুরস্কার দেওয়া হয় প্রতি বছর। পরিবারের পক্ষ থেকে সোমনাথ ঘোষ ও অমর ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি ছিল বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুল্যবান কথামালা।শিক্ষা ও শিক্ষক বিষয়ে তাঁর বক্তব্য মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা, পরিচালকমন্ডলীর সদস্য সহ ছাত্ররা। ছাত্রদের গান, কবিতা, বক্তব্যে অনুষ্ঠানটি ছিল চিত্তাকর্ষক। দ্বিতীয়ার্ধ্বে বিদ্যালয়ের ৭০-৭২ সালের প্রাক্তনীদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিল শিক্ষক সম্বর্ধনা।এই পর্বে তাঁদের সময়ের শিক্ষক চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিদ্যালয়ের তিন প্রাক্তন শিক্ষক তপন মজুমদার, অশোক দে, প্রভাত চ্যাটার্জী সহ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৌমেন ব্যানার্জীকে সম্বর্ধিত করা হয়। প্রাক্তনীরা শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন তাঁদের প্রণম্য শিক্ষকদের। স্মৃতিচারণে, শ্রদ্ধা ভালবাসার কথামালায় এই পর্বটি ছিল প্রাণবন্ত। শিক্ষক চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাক্তনীদের হাতে তুলে দেন স্মৃতি স্মারক। উল্লেখ্য, শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শিক্ষকতা কালে বিদ্যালয়ে ছাত্র শিক্ষক সমন্বয়ে নাটক পরিবেশন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়াচর্চায় ছাত্রদের সঙ্গী ও প্রিয়তম শিক্ষক হয়ে উঠেছিলেন।পরবর্তীতে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠভবনের অধ্যক্ষ সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।৫৬ বছর পরে তিনি বিদ্যালয় ও প্রাক্তনীদের ডাকে বিদ্যালয়ে এসে অনুষ্ঠানকে বর্ণময় করে তুললেন অনবদ্য কথামালায়।