এই কার্তিকে বীরভূমের বহু গ্রামে টহলগান ভোরের ঘুম ভাঙায়

শম্ভুনাথ সেনঃ

অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও গ্রামীণ সংস্কৃতিতে আজও বেঁচে আছে প্রভাতী গান “টহল”। এগানের সুরের মাধুর্যই আলাদা। সারা কার্তিক মাস জুড়ে বীরভূমের বহু গ্রামে গ্রামে এখনো এই “টহল গান”ভোরের ঘুম ভাঙায়। বৈষ্ণবদের এ এক সাধন সংগীত। এই গানের মাধ্যমে তাঁরা মাধুকরী ক’রে জীবন বাঁচায়। ধান কাটার মাস এই “কার্তিক”। কৃষিনির্ভর বীরভূমে এই কার্তিকে টহল গানের সুরে জেগে ওঠেন কৃষকের দল। সকাল সকাল উঠে, চলে যান মাঠের কাজে। গ্রামেরই গোপাল আশ্রমের বৈষ্ণব বাবাজীর শিষ্য রামকৃষ্ণ ও সুভাষের খঞ্জনী আর গানের সুরে এখনো জেগে ওঠে বীরভূমের খয়রাশোল ব্লকের “কেন্দ্রগড়িয়া”। আর সেই ছবি ধরা পড়েছে বীরভূমের সেরা সাপ্তাহিকি নয়াপ্রজন্মের পাতায়। অন্তত ১০ বছর ধরে তাঁরা এই টহল দিয়ে আসছেন বলে জানিয়েছেন গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা কবি বিমলাংশু শেখর চক্রবর্তী। কার্তিক মাস পড়তেই বীরভূমের এই কেন্দ্রগড়িয়া গ্রামে শুরু হয়ে যায় ঘুম-জাগানিয়া সংকীর্তন “টহল”। সারা গাঁয়ের মানুষ যখন হিমেল ভোরের ঘুম নিয়ে নিদ্রাচ্ছন্ন, তখনি রামকৃষ্ণ আর সুভাষের করতাল ধ্বনির ধাতব মূর্ছনার সাথে উদাত্ত গলায় গেয়ে ওঠা——“রাই জাগো,—– রাই জাগো’-র সুরমূর্ছনা সবাইকে জাগিয়ে তোলে। এই গ্রামে এমন প্রথা চলে আসছে বহু কাল ধরে। এই অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতায় আজও বজায় রয়েছে গ্রামের গৌরব।
উল্লেখ্য, বীরভূম সীমান্তে ঝাড়খন্ড লাগোয়া “কেন্দ্রগড়িয়া” একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম। এই কার্তিক মাসে প্রত্যেকদিন ভোর ৪ টে থেকে উঠে খঞ্জনি বাজিয়ে গ্রামেরই এই রামকৃষ্ণ ও সুভাষ সারা গ্রাম জুড়ে টহল দেন। এই একমাস তারা নিরামিষভোজী, ব্রহ্মচর্য পালন করেন। এই কার্তিকের কুয়াশা মাখা ভোরে টহল গানে গ্রাম পরিক্রমার সেই ছবি মর্নিং ওয়াক চলাকালীন ধরা পড়েছে গ্রামেরই এক কবি, অনুবাদক রন্তিদেব সরকারের মোবাইল ক্যামেরায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *