শম্ভুনাথ সেনঃ
‘চিঠি’ মানুষের মনের জানালা। চিঠি যে লেখে তার চেয়ে বড় কৃতিত্ব যে চিঠি লিখিয়ে নেয়। ইদানিং ব্যক্তিগত চিঠিপত্রের আদান-প্রদান প্রায় শেষ। ডাকবিভাগে এখন আর খাম, পোষ্টকার্ড পাওয়া যায় না। অথচ একদা চিঠি ছিল ভাবের আদান-প্রদানের প্রধান মাধ্যম। রবি ঠাকুর ব্যক্তিগত জীবনে হাজার হাজার চিঠি লিখেছেন। জেলে বসে চিঠি লিখেছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস। পত্রশিল্পের যখন শ্মশান যাত্রা তেমন সময়ে “আকাশবাণী” দৈনন্দিন সাতসকালে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর শ্রোতাদের চিঠিপত্রের ঝাঁপি নিয়ে “প্রাত্যহিকী অনুষ্ঠান” পরম্পরা ধরে রেখেছে আজও। ঠিক এই সময়ে বীরভূম পুলিশ বিভাগের এক হোমগার্ড ভলেন্টিয়ার মুন্সি দরুদ বাঁচিয়ে রেখেছেন চিঠি লেখার প্রয়াস। তাঁর বাড়ি বীরভূমের লাভপুর ব্লকের এক প্রত্যন্ত গ্রাম কাজীপাড়া। কাজের ফাঁকেই তিনি লেখেন চিঠি। এ পর্যন্ত বহু চিঠি বিভিন্ন দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে ও রেডিওতে সম্প্রচারিত হয়েছে। সেই চিঠিতে কখনো থাকে আবেদন, কখনো অভিযোগ, কখনো বা থাকে সমাজকে নতুন করে গড়ার নয়াভাবনা। আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাংলাভাষী বিভিন্ন দৈনিক সংবাদপত্রে তার চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন বিষয়ের উপর তার লেখা চিঠি সম্প্রচারিত হয়েছে আকাশবাণীতে। চিঠি লেখার সুবাদে “এশিয়া বুক অফ রেকর্ডস কর্তৃক গ্র্যান্ডমাস্টার পুরস্কার”, “ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ড” কর্তৃক পুরস্কার, “আমেরিকান মেরিট কাউন্সিল” কর্তৃক শংসাপত্র ছাড়াও জাতীয় রেকর্ড, ওয়ার্ল্ড রেকর্ড, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠা পুরস্কার, বীরভূমের মুখ, বঙ্গ গৌরব শংসাপত্র পেয়েছেন। দৈনিক সংবাদপত্র ছাড়াও দূরদর্শন, রেডিও তেহরানে তাঁর পত্রশিল্প বাঁচিয়ে রাখার কৃতিত্বের খবর সম্প্রচারিত হয়েছে। পত্রকার হিসেবে পেয়েছেন বিপুল জনপ্রিয়তা। সম্প্রতি তাঁর ১৩৫ টি চিঠির সমাহারে ১৭৬ পৃষ্ঠার “আমার চিঠি, আমার বই” নামকরণে কলকাতা “মরীচিকা” প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া আলকাপ গান, মাটির বাড়ি, গরুর গাড়ি, মাটির রাস্তা, উল বোনা, লেঠেল সম্প্রদায় আমাদের গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এই সব নানা প্রসঙ্গ তাঁর চিঠিতে প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া তাল পাতার পাখা, ফেরিওয়ালা ও হকারদের জীবনের প্রতিচ্ছবি, বাবুই পাখির বাসা, কাঠের নৌকা, ম্যাজিকওয়ালাদের প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে বইটিতে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে সাহিত্যচর্চা করা, দেশের উন্নয়ন ও সংস্কারের কথা, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কথা, করোনা পরিস্থিতিতে গৃহবন্দি অবস্থায় অনলাইনে পড়াশোনা, করোনার সময় স্কুল বন্ধ থাকার কারণে পড়াশোনায় ছেদ ইত্যাদি নানা বিষয় সম্ভারে সাজানো “আমার চিঠি, আমার বই”।