উত্তম মণ্ডলঃ
প্রায় নি:শব্দেই চলে গেলেন বীরভূমের দুবরাজপুর থানার গোহালিয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শৈবক্ষেত্র বক্রেশ্বর “রাঢ়পুরী আশ্রম”-এর প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট পণ্ডিত ও সাধক স্বামী অমৃতানন্দ সরস্বতী। বয়স হয়েছিল প্রায় ৯৭ বছর। বার্ধক্যজনিত কারণে ১ জুন প্রায় দশটা নাগাদ তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। সাধকরা তাঁদের পূর্ব পরিচয় সাধারণত প্রকাশ করেন না। তবে যতটুকু জানা যায়, তাঁর পূর্বাশ্রমের নাম—রমেন্দ্র কুমার চক্রবর্তী। সংস্কৃত সাহিত্যে পাণ্ডিত্যের জন্য পেয়েছিলেন “শাস্ত্রী” উপাধি। অধুনা পূর্ববঙ্গের এক প্রতিষ্ঠিত জমিদার বাড়ির এই সন্তানটি সে দেশের সাম্প্রতিক দাঙ্গার তাঁর পিতার নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখে এক সময় ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। এরপর হিমালয়ে যান। একটা সময় কাটিয়েছেন বৃন্দাবনে। একসময় পড়াশুনো করেছেন নদীয়া জেলার নবদ্বীপ শহরে। কলকাতা বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রীট থেকে প্রকাশিত চন্দননগরের বিপ্লবী মতিলাল (সংঘগুরু মতিলাল) প্রতিষ্ঠিত প্রবর্তক সংঘের মুখপত্র “প্রবর্তক” পত্রিকায় “উত্তর পথিক” ছদ্মনামে ভ্রমণবৃত্তান্ত লিখেছেন ধারাবাহিকভাবে। উপন্যাসও লিখেছেন, সেটি বেরিয়েছে বাজারে।
এরপর ঘুরতে ঘুরতে একসময় বীরভূমের বক্রেশ্বরে আসেন। থাকতে শুরু করেন চন্দ্রসায়রেরে পাড়ে একটি ভাড়া ঘরে। মাঝে মাঝে বেরিয়ে যান, আবার আসেন। তারপর বক্রেশ্বর নদীর তীরে রাঢ়ভূমের ইতিহাস ও সংস্কৃতি উদ্ধারের ইচ্ছে নিয়ে গড়ে তোলেন “রাঢ়পুরী আশ্রম।” সবুজের মাঝে একটুকরো বসতি। পরে ধীরে ধীরে তৈরি হয় দুটি মন্দির , একটি চণ্ডী ( কৃষ্ণাকৌশিকী), অন্যটি কৃষ্ণ মন্দির। সঙ্গে পাকা বসতবাড়ি। প্রতি বছর শিবচতুর্দশী তিথিতে আশ্রমে তিনদিন ধরে হোমযজ্ঞ ও মহোৎসব আয়োজিত হতে থাকে। এছাড়া সারা বছর চলতো বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তিদের সঙ্গে এ দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। আর সে আলোচনায় থাকতেন সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের ইংরেজির প্রথিতযশা অধ্যাপক ননীগোপাল সেন থেকে শুরু করে বিশিষ্ট চিকিৎসক, অধ্যাপক ও ছাত্রদল। তাঁর প্রয়াণে বহু মানুষ ভীড় করেন আশ্রমে। নিজের প্রতিষ্ঠিত আশ্রমেই তাঁকে তাঁর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী দাহ করা হয়। একসময় রাঢ়ভূমের তন্ত্রসাধনার ইতিবৃত্ত লেখার উপাদান সংগ্রহ করছিলেন। বার্ধক্যজনিত কারণে তা থেমে গিয়েছিল আগেই। সে কাজ অসমাপ্তই থেকে গেল।