শম্ভুনাথ সেনঃ
আজ ১৬ জুন, বঙ্গাব্দের পয়লা আষাঢ়। বর্ষাঋতুর প্রথম দিন। আর এই দিনটি বীরভূমের বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র জয়দেব-কেন্দুলী এলাকার মানুষের কাছে “গীতগোবিন্দ দিবস” হিসেবে চিহ্নিত। উল্লেখ্য, এই পয়লা আষাঢ় “মেঘদূত” লিখেছিলেন কবি কালিদাস, আর দ্বাদশ শতকে প্রেমের কবি জয়দেব গোস্বামী বীরভূমের এই কেন্দুলীর মাটিতে বসেই রচনা করেছিলেন কালজয়ী সংস্কৃত কাব্যগ্রন্থ “গীতগোবিন্দ”। যা বিশ্বের মানুষের কাছে আজও সমান সমাদৃত। কবি জয়দেবের জন্মভূমি অজয় নদের পাড়ে কেন্দুলীর ভক্তিভবনে জয়দেব অঞ্চল সংস্কৃতি সেবা সমিতির আয়োজনে এবারও এই পয়লা আষাঢ় সাড়ম্বরে “গীতগোবিন্দ দিবস” উদযাপিত হয়। সেই সঙ্গে সাহিত্য আড্ডার ২৯ তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান। আসলে আমাদের কৃষিনির্ভর বীরভূম। আর বীরভূমের কৃষি মূলতঃ বৃষ্টিনির্ভর। ৭০ শতাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই প্রতিবছর সুচারু বর্ষার প্রার্থনা করেন কৃষকের দল। আর এই বর্ষা ঋতুর আগমনকে বন্দনা করেই গীতগোবিন্দের সেই প্রথম শ্লোক মেঘৈমেদুরমম্বরম বনভুবঃ। এবারও বর্ষা শুরুর প্রথম দিনটিতে গীতগোবিন্দ দিবসে জয়দেব-কেন্দুলির ভক্তিভবনে বসে সাহিত্যের আড্ডা।
এবারের এই অনুষ্ঠান এক আড্ডাধারী সম্প্রতি প্রয়াত সেখ মারহুমের স্মৃতিতে উৎসর্গীকৃত করা হয়। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীরা উপস্থিত হন অনুষ্ঠানে। সভাপতিত্ব করেন কবি ও গল্পকার অমর দে। গীতগোবিন্দের সুর দিয়ে সভার সূচনা করেন সাহিত্যিক শান্তি কুমার রজক। মুখকথা পরিবেশন করেন সমিতির সভাপতি রণজিৎ মুখোপাধ্যায়। এদিন গীতগোবিন্দ পাঠ, কথা, কবিতা, গান আলোচনা চক্র চলে সারা দুপুর। প্রকাশিত হয় বেশ কয়েকটি পত্র-পত্রিকা। এদিন কবি নীলোৎপল ভট্টাচার্য, ডাঃ অরুনাভ সেনগুপ্ত, রাকেশ সর্দার, ড. তপন গোস্বামী, দেবগুরু বন্দোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন প্রান্তের কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নেন। উদ্যেক্তাদের পক্ষ থেকে কবি গোলাম রসুল, নাট্যকার মলয় ঘোষকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। সেখ মারহুমের স্মৃতিতে সম্মাননা জানানো হয় বিশিষ্ট সমাজসেবী শৈলেন মিশ্রকে। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন সাংবাদিক সুভাষ কবিরাজ ও কবি আনারুল হক।