“আজ জাতীয় তাঁত দিবস”: বীরভূমের তাঁত শিল্পীদের মনে হতাশার সুর

শম্ভুনাথ সেনঃ

আজ ৭ আগষ্ট। দিনটি “জাতীয় তাঁত দিবস” হিসেবে চিহ্নিত। উল্লেখ্য, ভারতে ১৯০৫ সালে শুরু হয়েছিল স্বদেশী আন্দোলন। যা দেশীয় শিল্প এবং বিশেষ করে তাঁত শিল্প এবং তাঁতী শিল্পীদের উৎসাহিত করেছিল। ২০১৫ সাল থেকে ভারত সরকার প্রতি বছর ৭ আগষ্টকে “জাতীয় তাঁত দিবস” হিসাবে উদযাপিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এবার ১০ তম “জাতীয় তাঁত দিবস” সারা ভারতবর্ষে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে। তুলে ধরা হচ্ছে তাঁত শিল্পের গুরুত্ব ও শিল্পীদের অবদানের কথা। তবে ইদানিং কালে গ্রামীণ তাঁত শিল্পীরা অনেকেই নানা সমস্যায় পড়েছেন। একদিকে যন্ত্রচালিত তাঁত অন্যদিকে উন্নত মেশিনের আগমনে হস্তচালিত তাঁতিরা অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। তবুও বীরভূমে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ এই তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তবে রাজনগর ব্লকের “তাঁতিপাড়া” গ্রামে তন্তুবায় পরিবারের বাস জেলার বুকে সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া জেলার বসোয়া, বিষ্ণুপুর, ভালকুটি, কেন্দুলা এমন সব গ্রামের অনেক তাঁতিরা এখনো তাঁত বুনে তাদের জীবন-জীবিকা চালায়। তবে পরিশ্রম অনুযায়ী লাভ না থাকায় বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা আর এই শিল্পে যুক্ত হতে চাইছেন না। তবুও তাঁতিপাড়া গ্রামের এক হাজার তন্তুবায় পরিবারের মধ্যে প্রায় ৫০০ পরিবার পরম্পরায় এখনো ধরে রেখেছে তাদের তাঁতের কাজ। তাঁতই তাঁদের জীবন-জীবিকা। তাঁতিপাড়া গ্রামে ঢুকলেই শোনা যায় মাকুর ঠকাঠক শব্দ। সকাল থেকেই পরিবারের ছেলে-মেয়ে সবাই মিলে লেগে পড়ে তাঁতের কাজে। কেউবা তসর গুটি থেকে সুতা তৈরি করে, কেউবা লাটাই এর গুটোয় সুতো, আবার কেউবা বোনে তাঁত। এখন আবার হস্তচালিত যন্ত্রের পাশাপাশি বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র ঠাঁই পেয়েছে। তবে হস্তচালিত তাঁতেই তৈরি হয় তসরের শাড়ি, ধুতি, সালোয়ার সুট, দোপাট্টা, পাঞ্জাবি অনেক কিছু। এইসব শাড়ির মূল উপাদান তসর ও রেশমের গুটি ও জরি। যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহাজনেরাই এগুলি সরবরাহ করে। তাই শিল্পীদের লাভের গুড় খেয়ে নেয় মধ্যস্থ কারবারীরা। হতাশার সুরে একথা জানিয়েছেন তাঁতীপাড়ার এক তাঁত শিল্পী অজয় মণ্ডল। বীরভূমে রেশম ও তসর গুটি উৎপাদনের জন্য দুবরাজপুর ব্লকের পণ্ডিতপুর, বোলপুরের মুলুক, শ্রীনিকেতন এমন জেলার ৮ টি জায়গায় নির্মাণ হয়েছে সরকারি খামার। সেখানে যেমন গুটি উৎপন্ন হয়, তেমনি শিল্পীদের দেওয়া হয় প্রশিক্ষণ। এখন আবার তাঁতে বোনা কাপড়ে নানান রং তুলির কাজ করে চাহিদা উপযোগী করে তোলা হয়। আজও তাঁতিপাড়ার হাতে বোনা তাঁতের শাড়ির সুনাম রয়েছে যথেষ্ট। তাঁতের কাপড়ের চাহিদা রয়েছে দেশ-বিদেশে। অনেক শিল্পী বিনামূল্যে পেয়েছেন তাঁতযন্ত্র, সরকারি সাহায্য, তবুও এই হস্তচালিত তাঁতশিল্প ও শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি পদক্ষেপ বড় জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *