
শম্ভুনাথ সেনঃ
পয়লা মাঘ কৃষিপ্রধান রাঢ় বাংলায় গ্রামে-গঞ্জে নানা দেবতার পুজো হয়।এই দিনটি গ্রামীণ লোকোকথায় ‘আখ্যান দিন’ হিসেবে চিহ্নিত। আসলে সংক্রান্তিতে শেষ হয় সূর্যের উত্তরায়ণ, মাঘের শুরুতে এবার দক্ষিণায়নের পালা। পৌষ সংক্রান্তি শেষ হলেই বীরভূমের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামীণ সংহতি রক্ষায় লোকায়ত উৎসবে মেতে ওঠেন গ্রামের মানুষজন। প্রতি বছরের মতো এবারও আজ পয়লা মাঘ ইং ১৫ জানুয়ারি বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের খয়েরবন-বনহরি গ্রামে “বাবা বাস্তুপুরুষ”এর স্থানে মিলন মহোৎসবের আয়োজন করা হয়। খোলা আকাশের নীচে এই গ্রামে আজ “বাস্তুপুরুষ” পুরুষানুক্রমে উপাসিত দেবতা। মৎস্য পুরাণে এই দেবতা সম্পর্কে উল্লেখিত আছে।

এদিন সকাল থেকেই শুরু হয় পুজো-পাঠ, হোম-যজ্ঞ। মনস্কামনা পূরণের উদ্দেশ্যে নানা নৈবেদ্য নিয়ে হাজির হন হাজার হাজার ভক্ত-পুণ্যার্থী। হয় ছাগ বলী। পুজো শেষে পুরোহিত জীবন কুমার রায় ও সন্তোষ কুমার রায় উপস্থিত ভক্তদের মাথায় ছিটিয়ে দেন শান্তি বারি। খয়েরবন, মেটেলা, গুনডোবা, বনহরি, ঝাঁপড়তলা, বক্রেশ্বর, বেলবুনি, পণ্ডিতপুর, হালসোত, দৌলতপুর এমন বিভিন্ন গ্রাম এবং সংলগ্ন দুবরাজপুর পুরসভার বহু মানুষ মিলিত হয় এই মহোৎসব মিলনমেলায়। একসঙ্গে ভোগ ও প্রসাদ গ্রহণের নিমিত্তে পালিত হয় অরন্ধন দিবস। অন্ততঃ ৭ হাজার মানুষ এদিন একসাথে গ্রহণ করে খিঁচুড়ি প্রসাদ। এই এলাকার মানুষজন “বাবা বাস্তুপুরুষ” পূজা-মহোৎসবের জন্য বছরভর অপেক্ষায় থাকেন। প্রতিটি বাড়িতে আসেন আত্মীয় পরিজনেরা। গ্রামের মানুষের কাছে এটিই প্রধান উৎসব বলে জানিয়েছেন গ্রামেরই এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গোপীনাথ মণ্ডল।
