
সেখ রিয়াজুদ্দিনঃ
বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কর্তৃক গরু পাচার মামলার অভিযোগে তিহার জেলে বন্দি। সেই প্রেক্ষিতে দলীয় পরিচালনার জন্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূম সফরে এসে জেলা কোর কমিটি গঠন করে দেন। সর্বপরি জেলার দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী বলে ঘোষণা করেছিলেন। সেই মোতাবেক কোর কমিটি কর্তৃক জেলার দলীয় কাজকর্ম পরিচালিত হয়। পরপর দুটি নির্বাচনেও কোর কমিটি ভালো সাফল্য অর্জন করে এবং রাজ্যেও প্রশংসিত হয়। এপর্যন্ত সব ঠিকঠাক থাকলেও অনুব্রত মণ্ডল জেল ফেরত আসতেই শুরু হয়ে যায় যুযুধান দুই গোষ্ঠীর চোরাস্রোত প্রবাহ। দেখা দেয় আশঙ্কা জেলা পরিচালনার ক্ষেত্রে জেলা সভাপতি না জেলা কোর কমিটি? যদিও শেষ পর্যন্ত সভাপতি ও কোর কমিটিকে এক করে দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই কমিটির মধ্যেও দেখা দেয় নানান বিতর্ক। সেই বিতর্কের জেরের মধ্যে ফের বিতর্ক। তবে এবার কোর কমিটির বৈঠক না হওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব। উল্লেখ্য, আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বীরভূম জেলা কোর কমিটির দুই সদস্য তথা জেলা সভাধিপতি কাজল সেখ ও বিধায়ক ডঃ আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়। কোর কমিটির বৈঠক কেনো ডাকা হয়নি, সে বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিলেন কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “আমি কোর কমিটির আহ্বায়ক, আর অনুব্রত মণ্ডল দলের সভাপতি ও কোর কমিটির চেয়ারম্যান। তাই আমার চেয়ে ওনার গুরুত্ব বা ক্ষমতা বেশি। তিনি যেদিন বলবেন, যেদিন ডাকবেন, সেদিনই কোর কমিটির বৈঠক হবে। উনার অন্যান্য কর্মসূচি মোতাবেক। পাশাপাশি তিনি আরও দাবি করেন, আগের কোর কমিটির বৈঠকে নির্দিষ্ট করে কোনও তারিখ ঠিক করা হয়নি— বলা হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডল অর্থাৎ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে, তিনি ফাঁকা থাকলে দিন নির্ধারণ করা হবে। অর্থাৎ, গোটা বিষয়টির দায় কার্যত অনুব্রত মণ্ডলের ওপরেই চাপালেন তিনি। যদিও মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং জেলা সফরে এসে নিজে হাতে জেলা পরিচালনার জন্য এই কোর কমিটি গঠন করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি কার্যত বিলুপ্তির পথে—এটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে জেলা সভাধিপতি কাজল সেখ বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন উনার বয়স হয়েছে তাই ভূল ভাল বকছেন। গত ২২ মার্চ কোর কমিটির বৈঠক বসেছিল সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় আগামী ১৯ এপ্রিল পরবর্তী কোর কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হবে সিউড়ি দলীয় কার্যালয়ে। এখন পর্যন্ত কোর কমিটির বসার সময় হলো না। যার প্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে কোর কমিটিকে এড়িয়ে যেতে চাইছে। মনে হয় বঙ্গজননী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এড়িয়ে যেতে চাইছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথাকে মান্যতা দিতে চাইছে না। বীরভূম জেলায় কিছু নেতা তৈরি হয়ে গেছে যারা নিজেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উর্দ্ধে ভাবছে। কোর কমিটির আহ্বায়ক এর কাছে বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে বার্তা, অভিষেক ব্যানার্জির যে বার্তা সেটাকে মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা করুন। আহ্বায়কের চেয়ারটা তিনি দিয়েছেন। সেই চেয়ারের মর্যাদা রাখার চেষ্টা করুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক ব্যানার্জির হাত মাথায় থাকলে আহ্বায়ক থাকবেন, না থাকলে কোথায় যাবেন সময় কথা বলবে। এই রূপ পারস্পরিক কথোপকথন নিয়ে জেলার মধ্যে রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠছে।