
দীপককুমার দাসঃ
ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে একটি আশ্চর্য ট্রেন্ড—মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট, একটি স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাস আর সামান্য পরিমাণ হলুদ গুঁড়ো দিয়ে তৈরি এক রঙিন আলোর খেলা। এই অদ্ভুত কিন্তু মোহময় দৃশ্য এখন নেটিজেনদের নতুন আকর্ষণ। কিছুদিন আগে ঘিবলি আর্টের ট্রেন্ড চলছিল। আর এবার পাঁচ থেকে পঁচাশি মেতেছে গ্লোয়িং ওয়াটার এ। বর্তমান সোস্যাল মিডিয়ায় এই ট্রেন্ড এখন রীতিমতো ভাইরাল।
কাঁচের গ্লাস, জল, এক চামচ হলুদ ঘরের সামান্য এই কয়েকটা জিনিস খুব সহজলভ্য। আর তার সঙ্গে মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইটের আলো। সম্পূর্ণ অন্ধকার ঘরে সেই লাইটে কাঁচের গ্লাসের জলে ছড়িয়ে দেওয়া হলুদ কতটা সুন্দর দৃশ্য তৈরী করতে পারে সেটা সোস্যাল মিডিয়ার গ্লোয়িং ওয়াটার সংক্রান্ত পোষ্ট গুলো দেখলেই বুঝতে পারা যাচ্ছে। আলোর খেলায় সাধারণ ঘটনাও হয়ে উঠেছে মনোমুগ্ধকর। আর নতুন এই ট্রেন্ডে শুধু হলুদ গুঁড়ো নয় আরো অনেক কিছু ব্যবহার করে বৈচিত্র্য আনছেন নেট নাগরিকরা।
ব্যবহারকারীরা প্রথমেই মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে নিন। উপুর করে রাখা মোবাইলের ঐ ফ্ল্যাশ লাইটের উপর জল ভর্তি একটা কাঁচের গ্লাস রেখে দিন। এরপর ঘরটায় দরজা জানালা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে দিন। এরপর এক চামচ হলুদ গুঁড়ো ঐ কাঁচের গ্লাসের জলে ছড়িয়ে দিন ধীরে ধীরে। দেখবেন হলুদ গুঁড়ো আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে জলের সঙ্গে। ফ্ল্যাশ অন করতেই গ্লাসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে এক মায়াবী হলুদাভ আভা, কখনো কমলা, কখনো প্রায় সোনালী। ফ্রেমে এই দৃশ্য রীতিমতো যাদুকরী মনে হচ্ছে, আর তাতেই মজে উঠছে সবাই।
এই আলো-খেলার পেছনে আছে একদম সহজ পদার্থবিজ্ঞানের যুক্তি। হলুদ গুঁড়োর মধ্যে থাকা কণাগুলো ফ্ল্যাশলাইটের সাদা আলোকে শোষণ ও প্রতিফলিত করে। এতে তৈরি হয় একধরনের ফিল্টারড লাইট ইফেক্ট। কাঁচের স্বচ্ছতা এবং মোবাইলের তীব্র ফ্ল্যাশ একত্রে এই আলোর বিচ্ছুরণকে করে তোলে আরও চোখ ধাঁধানো।
এই আলোর খেলা এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তার কারণ– এটা সহজেই করা যায়। প্রয়োজন নেই কোনো বিশেষ যন্ত্রপাতির—শুধু মোবাইল, গ্লাস আর রান্নাঘরে থাকা হলুদ গুঁড়ো। এছাড়াও আলো-আঁধারির এই খেলা ভিডিও বা ছবি হিসেবে দারুণ লাগে। তাই টিকটক, রিলস বা ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে দারুণভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এই ট্রেন্ড। অনেকেই একঘেয়ে কনটেন্ট থেকে সরে এসে এই নতুন “লাইট ট্রিক” দিয়ে বানাচ্ছেন সৃজনশীল ও মজার ভিডিও।
তবে মোবাইলের ফ্ল্যাশ বেশি গরম হলে ফোনের ক্ষতি হতে পারে, তাই বেশি সময় ফ্ল্যাশ অন না রাখাই ভালো অথবা গ্লাস ঠিকভাবে বসানো না হলে ভেঙে যেতে পারে—এতে ফোনও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু সতর্কতা অবলম্বন অবশ্যই জরুরি।
এ এক অভিনব আলোর খেলা, প্রযুক্তি আর সৃজনশীলতার মিলিত এক ছোট্ট উদাহরণ। ছোট ছোট আনন্দের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে নতুন ভাবনার বীজ। মোবাইল আর মশলার হাত ধরেই যখন জন্ম নিচ্ছে এমন ট্রেন্ড, তখন বুঝতে হয় নেট নাগরিকরা কেবল দর্শক নন, তারাই আজকের দিন বদলের কারিগর।