রহস্যময় গোলকুন্ডা দুর্গ: কোহিনূর হীরার উৎস ও ঐতিহাসিক উপাখ্যান

নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ

গোলকুন্ডা দুর্গ (Golkonda Fort) ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের হায়দরাবাদ শহরের নিকটে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি শুধু তার স্থাপত্যিক কৌশল ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য নয়, বরং নানা রহস্য ও কিংবদন্তির জন্যও সমাদৃত। কাকতীয় রাজবংশের সময়ে নির্মিত এই দুর্গ পরবর্তীতে বাহমানি, কুতুবশাহী ও মোগলদের শাসন দেখেছে।

স্থাপত্যশৈলী ও বিস্ময়কর ধ্বনি-প্রতিধ্বনি ব্যবস্থা

গোলকুন্ডা দুর্গের প্রধান ফটকের নিচে একটি নির্দিষ্ট স্থানে তালি বাজালে, সেই শব্দ দুর্গের সবচেয়ে উপরের প্যালেস পর্যন্ত পৌঁছে যায় – প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে! এই ধ্বনি প্রতিধ্বনি ব্যবস্থা কোনো আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াই গড়ে তোলা হয়েছিল, যা আজও স্থাপত্যবিশারদদের বিস্ময়ে ফেলেছে।
এটি তখনকার সময়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি অংশ ছিল – কেউ যদি দুর্গের প্রবেশপথে ঢুকত, ভিতরের প্রহরীরা সেই শব্দে সতর্ক হয়ে যেত।

দুর্গের গোপন সুড়ঙ্গ ও গুপ্তধনের রহস্য

প্রচলিত কথিত আছে যে, গোলকুন্ডা দুর্গের নিচে অসংখ্য গোপন সুড়ঙ্গ রয়েছে যেগুলোর একটি নাকি হায়দরাবাদের চারমিনার পর্যন্ত বিস্তৃত। যদিও এখনও এই সুড়ঙ্গগুলি পুরোপুরি আবিষ্কৃত হয়নি, তবে কিছু প্রমাণ আজও মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায়।
এছাড়াও বলা হয়ে থাকে, এখানে কুতুবশাহী রাজাদের অজস্র ধনরত্ন মাটির নিচে লুকানো ছিল – যার একটি অংশ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। বহুবার গুপ্তধন খোঁজার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু সফলতা মেলেনি।

কোহিনূর হীরার উত্স

বিশ্বখ্যাত কোহিনূর হীরাও এক সময় গোলকুন্ডার খনিতে খুঁজে পাওয়া যায়। গোলকুন্ডা অঞ্চল এক সময় হীরা উত্তোলনের জন্য বিশ্ববিখ্যাত ছিল। এখানকার খনি থেকেই বিশ্বের অনেক মূল্যবান হীরা আহরণ করা হয়েছিল, যার অন্যতম হলো কোহিনূর, হোপ ডায়মন্ড ও রিজেন্ট ডায়মন্ড।

রহস্যময় কবর ও অভিশাপের গল্প

গোলকুন্ডা দুর্গ ঘিরে একাধিক কিংবদন্তি প্রচলিত। একটি জনপ্রিয় কাহিনি অনুযায়ী, কুতুবশাহী রাজবংশের এক রানির আকস্মিক মৃত্যু দুর্গের অভ্যন্তরে ঘটে এবং এরপর থেকেই দুর্গে অদ্ভুত শব্দ ও উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। স্থানীয়রা মনে করে, দুর্গে রাতের বেলায় আত্মা ভ্রমণ করে, যার জন্য দুর্গ সূর্যাস্তের পর বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গোলকুন্ডা দুর্গ শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন নয়, বরং ইতিহাস, স্থাপত্য, রাজনীতি ও লোককাহিনির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। এই দুর্গ যেন আজও নানা অনুচ্চারিত গল্প ও রহস্য বহন করে চলেছে। এর প্রতিটি ইট যেন অতীতের কথা বলে, এবং প্রতি পদক্ষেপেই দর্শনার্থীরা হারিয়ে যায় ইতিহাসের গভীরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *