নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
মুর্শিদাবাদ জেলার সোনারুন্ডি গ্রামে অবস্থিত সোনারুন্ডি রাজবাড়ি ১৮শ শতকে মহারাজা নিত্যানন্দ দালাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই রাজবাড়ি, যা বনোয়ারিবাদ রাজবাড়ি নামেও পরিচিত, দেবতা বনোয়ারি দেবের সঙ্গে গভীর সাংস্কৃতিক যোগসূত্রের কারণে প্রসিদ্ধ। আধ্যাত্মিক গুরুত্বের জন্য একে অনেক সময় “দ্বিতীয় বৃন্দাবন” বলা হয়।
সোনারুন্ডি রাজবাড়ির ভিডিও দেখতে নিচের ছবিতে ক্লিক করুন।

তাঁতশিল্পী থেকে মহারাজা :
নিত্যানন্দ দালাল ১৭৫০ সালে সোনারুন্ডির এক তাঁতশিল্পী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় পারদর্শিতা তাঁকে গ্রাম থেকে মুঘল সম্রাট শাহআলম দ্বিতীয়ের দরবার পর্যন্ত নিয়ে যায়।
মুঘল দরবারে উত্থান :
ফারসি ভাষায় তাঁর দক্ষতা সম্রাটকে মুগ্ধ করেছিল। সম্রাট তাঁকে মীরমুনশি (সচিব) পদে নিযুক্ত করেন এবং দানেশমন্দ (জ্ঞানি ব্যক্তি) উপাধি প্রদান করেন।
‘রাজা’ উপাধি প্রাপ্তি :
পরবর্তীতে সম্রাট তাঁকে মানসবদার (জমিদারির পদ) হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং ‘রাজা’ উপাধি প্রদান করেন। তাঁর পূর্ণ উপাধি হয়েছিল—
মহারাজা নিত্যানন্দ দানেশমন্দ আমীর উল-মুলক, আজমত-উদ-দৌল্লা, সাফদর জং।
সোনারুন্ডিতে জমির মালিকানা :
ধারণা করা হয়, সম্রাট শাহআলম দ্বিতীয়ের সহায়তায় নিত্যানন্দ সোনারুন্ডি অঞ্চলে জমিদারি লাভ করেছিলেন। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও মারাঠা আক্রমণে দিল্লি থেকে বিতাড়িত হয়ে সম্রাট বর্ধমানের রাজার আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন।
স্থাপত্য ও ধর্মীয় গুরুত্ব
অনন্য স্থাপত্য :
মুর্শিদাবাদের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন সোনারুন্ডি রাজবাড়ি। প্রাসাদটির পরিকল্পনায় বাগান ও মন্দিরের উপস্থিতি বৃন্দাবনের আধ্যাত্মিক পরিবেশকে জাগিয়ে তুলেছিল।

আধ্যাত্মিক সম্পর্ক :
রাজবংশের গৃহদেবতা বনোয়ারি দেবের নাম থেকেই বনোয়ারিবাদ নামটির উৎপত্তি। প্রাসাদের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে এবং এর বৃন্দাবনসদৃশ স্থাপত্য উপাদান একে “দ্বিতীয় বৃন্দাবন”-এর মর্যাদা প্রদান করেছিল।
বর্তমান অবস্থা ও ঐতিহ্য
অবহেলিত নিদর্শন :
ঐতিহাসিক সোনারুন্ডি রাজবাড়ি বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে।
সংরক্ষণের দাবি :
ইতিহাসবিদ ও ঐতিহ্যপ্রেমীরা এই প্রাসাদকে সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়েছেন, যাতে এটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে এবং ইতিহাসের এই অমূল্য সম্পদ সুরক্ষিত থাকে।