নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে পৃথিবীর নানা প্রান্তে বহু প্রাচীন বিশ্বাস ও রীতি প্রচলিত রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষত হিন্দু শাস্ত্রে গ্রহণকালে খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ ও ধর্মীয় বিশ্বাস – দুই দিক থেকেই কিছু ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
ধর্মীয় বিশ্বাস
শাস্ত্রমতে, গ্রহণের সময় সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী এক বিশেষ অবস্থানে আসে। এই অবস্থাকে অশুভ বলে মনে করা হয়। পুরাণে বলা আছে, গ্রহণের সময় সূর্য-চন্দ্র রাহু-কেতুর দ্বারা গ্রাসিত হন। ফলে ওই সময়ে কোনো পবিত্র কাজ যেমন পূজা-পাঠ, যজ্ঞ বা আহার নিষিদ্ধ বলে ধরা হয়। বিশ্বাস করা হয়, গ্রহণকালে রান্না করা বা খাবার গ্রহণ করলে শরীরে অশুদ্ধি ও দোষ প্রবেশ করে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
প্রাচীনকালে বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামের অভাব ছিল। তখন মানুষ আকাশের অস্বাভাবিক ঘটনাকে রহস্যময় ও ভয়ংকর বলে মনে করত। চন্দ্রগ্রহণের সময় দীর্ঘ সময় ধরে আলো না পাওয়ায় রান্না করা খাবারে দ্রুত জীবাণু জন্মাতে পারে—এমন ধারণাও ছিল। যদিও আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে গ্রহণের সঙ্গে শরীরের কোনো ক্ষতিকর প্রভাবের সরাসরি সম্পর্ক নেই।
আয়ুর্বেদের মতে, গ্রহণকালে শরীরের পরিপাকশক্তি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই এই সময় ভারী বা অতি তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে বলা হয়। কেউ কেউ উপবাস বা অল্প ফলমূল খেয়ে থাকেন। এতে শরীর হালকা থাকে এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি
আজকের যুগে বিজ্ঞান অনেক কুসংস্কার ভেঙে দিয়েছে। তবুও বহু মানুষ প্রথা, বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক কারণে চন্দ্রগ্রহণের সময় খাবার খেতে চান না। কেউ কেউ এটিকে মানসিক শৃঙ্খলার অংশ হিসেবেও দেখেন।
চন্দ্রগ্রহণে খাবার না খাওয়া একদিকে যেমন ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রথার সঙ্গে জড়িত, অন্যদিকে স্বাস্থ্যগত ও বৈজ্ঞানিক যুক্তিও আংশিকভাবে এতে মেলে। আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে গ্রহণের সময় খাবার খাওয়ায় কোনো সরাসরি ক্ষতি নেই, তবে প্রথাগত বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেকেই এখনও এই নিয়ম মেনে চলেন।
