ভোটার তালিকা সংশোধনে SIR: ১৬ ডিসেম্বর খসড়া, ১৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত তালিকা

নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ

পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা আরও স্বচ্ছ ও নির্ভুল করতে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এই বিশেষ অভিযানে রাজ্যের ভোটার তালিকা সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ভুয়ো, মৃত বা ডুপ্লিকেট ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে প্রকৃত ভোটারদের অধিকার সুরক্ষিত করাই মূল লক্ষ্য। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৬ডিসেম্বর রাজ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। খসড়া তালিকায় নাগরিকরা দেখতে পারবেন তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে কিনা বা কোনও ভুল তথ্য রয়েছে কিনা।

নাম যাচাই করবেন যেভাবে

ভোটাররা অনলাইন ও অফলাইন—দু’ভাবেই নিজের নাম যাচাই করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের (CEO) ওয়েবসাইটে EPIC নম্বর বা নাম ও ঠিকানা দিয়ে খোঁজ করা যাবে। পাশাপাশি, নিজ নিজ এলাকার বুথ লেভেল অফিসার (BLO)-এর কাছেও খসড়া তালিকার কপি পাওয়া যাবে।

যাঁদের নাম তালিকায় থাকবে না

SIR প্রক্রিয়ায় মৃত ভোটার, অন্যত্র স্থায়ীভাবে চলে যাওয়া ভোটার, ডুপ্লিকেট নাম থাকা ভোটার ও অসম্পূর্ণ তথ্য থাকা ভোটারদের আলাদা ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করা হবে। তবে প্রমাণসহ আবেদন জানালে নাম ফের অন্তর্ভুক্তির সুযোগ থাকবে।

১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি দাবি–আপত্তির সময়

খসড়া তালিকায় নাম না থাকলে বা কোনও ভুল থাকলে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দাবি ও আপত্তি জানানো যাবে। এই সময়ে নতুন নাম সংযোজন, নামের বানান সংশোধন, ঠিকানা বা বয়স সংশোধন, ভুল ভাবে বাদ পড়া নাম ফের অন্তর্ভুক্তিকরণ–এই সব আবেদন গ্রহণ করা হবে। দাবি–আপত্তি অনলাইনে (ECI, CEO WB ওয়েবসাইট ও Voter Helpline App) অথবা অফলাইনে BLO ও নির্বাচন দফতরের নির্দিষ্ট কাউন্টারে জমা দেওয়া যাবে।

কিভাবে হবে শুনানি

ভোটারদের মোট তিনটি তালিকায় ভাগ করেছে কমিশন— নিজস্ব ম্যাপিং, প্রজেনি ম্যাপিং এবং নন-ম্যাপিং। রাজ্যে শেষ বার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। সুতরাং ২০০২ সালে যাঁদের নাম ছিল, তাঁরা নিজস্ব ম্যাপিংয়ের তালিকায় পড়ছেন। যাঁদের নাম ২০০২ সালের তালিকায় না থাকলেও বাবা-মা বা আত্মীয়ের নাম আছে, তাঁরা প্রজেনি ম্যাপিং তালিকায় রয়েছেন। আর যাঁদের নিজেদের নাম বা আত্মীয়ের নামও ২০০২ সালের তালিকায় নেই তাঁরা নন-ম্যাপিং তালিকাভুক্ত। তৃতীয় তালিকার  নন ম্যাপিং সকলকেই কমিশনের তরফে শুনানিতে ডাকা হবে। তাঁদের সকলের তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে দেখা হবে। এছাড়া নিজস্ব ম্যাপিং ও প্রজেনি ম্যাপিং তালিকার ভোটারদের মধ্যে কারও তথ্যে অসংগতি থাকলে তাঁদেরও শুনানিতে ডাকা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। আবেদনকারীদের লিখিত নোটিস, BLO-এর মাধ্যমে, মোবাইল SMS বা অফিসের নোটিস বোর্ডে শুনানির দিনক্ষণ জানানো হবে। নির্ধারিত দিনে হাজির না হলে আবেদন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী SIR প্রক্রিয়ায় দাবি–আপত্তির শুনানি সাধারণত নিচের জায়গাগুলির যেকোনও একটিতে হয়—

১) ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (ERO/AERO)—সংশ্লিষ্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিস-এই সবচেয়ে বেশি হেয়ারিং হয়। এটি সাধারণত ব্লক অফিস, মহকুমা অফিস বা পুরসভা ভবনের মধ্যেই থাকে। নোটিসে স্পষ্ট করে ঠিকানা উল্লেখ থাকে।

২) ব্লক অফিস / মহকুমা অফিস—গ্রামীণ ও আধা-শহর এলাকায় অনেক সময় ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিস (BDO অফিস) বা মহকুমা শাসকের দফতরে শুনানি নেওয়া হয়।

৩) পৌরসভা বা ওয়ার্ড অফিস—শহরাঞ্চলে অনেক ক্ষেত্রে পৌরসভা ভবন, ওয়ার্ড অফিস বা কমিউনিটি হল-এ হেয়ারিং হয়।

৪) স্থানীয় সরকারি ভবন / স্কুল—প্রয়োজন হলে নির্বাচন কমিশন সরকারি স্কুল, পঞ্চায়েত অফিস, কমিউনিটি হলে এই ধরনের স্থানেও অস্থায়ীভাবে শুনানির ব্যবস্থা করে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল হেয়ারিংয়ের স্থান আগাম জানিয়ে দেওয়া হয় (লিখিত নোটিস, SMS বা BLO-এর মাধ্যমে)। নিজের আবেদন নম্বর ও পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক এবং নির্ধারিত দিনে হাজির না হলে আবেদন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কবে প্রকাশ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা

সব যাচাই, দাবি–আপত্তি ও শুনানি শেষ হওয়ার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এই তালিকাই আগামী নির্বাচনের জন্য বৈধ ভোটার তালিকা হিসেবে গণ্য হবে।

ভোটাধিকার সুরক্ষিত রাখতে প্রত্যেক নাগরিকের সময়মতো খসড়া ভোটার তালিকায় নিজের নাম যাচাই করা এবং প্রয়োজন হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দাবি–আপত্তি জানানো আবশ্যিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *