বিপিন পালঃ
বীরভূম জেলার খয়রাশোল থানার লাউবেড়িয়া গ্রামের মা মহামায়া দুর্গা শিলা মূর্তি রুপে পুজিতা হন। বচনাবলী থেকে শোনা যায় আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছরের আগে থেকে মা মহাময়ার শিলামূর্তি পুজো হয় আসছে। পুজো কে সূচনা করেছিলেন কারো জানা নেই। তবে নন্দী পরিবার সুত্রে জানা যায় মোটামুটি ১৮০ বছর পূর্বে পুজোর ভার নিয়েছিলেন নন্দী পরিবারের মহৎচরণ নন্দী ও চাকর নন্দী। পরবর্তীতে পুজোর ভার গ্রহণ করেন কেদার নন্দী ও তিনকড়ি নন্দী তারও পরে পুলিনবিহারী নন্দী ও পশুপতি নন্দী পুজোর ভার নেন। তারও পরে শিবদাস নন্দী, মদনমোহন নন্দী ও পঞ্চানন নন্দী পুজোর ভার নেন। অধুনা মা মহামায়ার পুজোর ভার গ্রহণ করেছেন নন্দী পরিবারের শুভেন্দু নন্দী, দিব্যেন্দু নন্দী ও মনোজ নন্দী। শাক্তমতে ও পঞ্জিকা মতে মায়ের পুজো হয়। সপ্তমীর দিনে ঢাক ঢোল, কাঁসর, ঘন্টা, খোল, করতাল সহযোগে মায়ের গান করতে করতে এবং বহু ভক্ত দন্ডি টানতে টানতে মায়ের বারি আসে। বারি আনার দিনে জড়ো হয় হাজারো ভক্ত। বারি আনা এক আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে। শুধুমাত্র নন্দীবাড়ীর বিবাহিত পুরুষেরাই দোলা নিয়ে আসেন। সপ্তমী থেকে দশমী পর্য্যন্ত গাই ঘি দিয়ে দুটি প্রদীপ জ্বালানো হয়। মাকে সোনা ও রুপোর অলঙ্কারে সুসজ্জিত করা হয়। সপ্তমী থেকে দশমী পর্য্যন্ত ফল, চিঁড়া, মিষ্টান্ন সহ অন্যান্য পুজোর সামগ্রী দিয়ে মাকে পুজো দেওয়া হয়। সপ্তমীতে আখ বলি, অষ্টমীতে দুটি মহিষ ও ৯ টি ছাগ বলি দেওয়া হয়। নবমীতে দুটি মহিষ ও ৩০-৩৫ টি ছাগ বলি ও ৩টি মেষ বলি দেওয়া হয়। নবমীর বলি মানতের উপর নির্ভর করে। বহু পূর্বে মায়ের মন্দির মাটির চালা ঘর ছিল। পরবর্তীতে মন্দিরটি সংস্কার করে পাকা মন্দির তৈরী করা হয়।পুজোর সম্পূর্ণ খরচ মায়ের জমির আয়, পুকুরের আয় ছাড়াও নন্দী পরিবার ও দৌহিত্রদের কাছ থেকে আদায় করা হয়। বহু পূর্বে এখানকার মায়ের মন্দিরের মৃত্তিকা নিয়ে ঝাড়খণ্ডের মশলিয়া, বীরভূমের রাজনগরে ও নিকটবর্তী তারাপুর গ্রামে অধুনা মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিগত করোনাকালের আগে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। করোনাকালে সরকারি নিয়মবিধি মেনে সমস্তরকম অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। করোনাবিধি শিথিল হওয়ায় এ বছর গ্রামের মহিলা ও পুরুষদের অংশগ্রহণে মিউজিক্যাল চেয়ার, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, শঙ্খবাদন, নাচ গান, আবৃতি সহ নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে জানা যায়। দশমীর রাত্রে সাড়ম্বরে মায়ের দোলা বিসর্জন করা হয়। এই পুজো নন্দী পরিবারের হলেও গ্রামের সকলেই অংশগ্রহণ করেন এবং বছর ভর অপেক্ষা করেন পুজোর জন্য। জানালেন নন্দী পরিবারের সদস্য শুভেন্দু নন্দী।