
মেহের সেখঃ
দুর্গাপুজোর কয়েকটা দিন হৈ-হুল্লোড়, আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন আপামর বাঙালি। দেশেবিদেশে যেখানেই বাঙালিরা বসবাস করেন সেখানেই দুর্গাপুজো করেন এবং পুজোর কয়েকটা দিন আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। দুর্গাপুজোয় বিভিন্ন পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যা গুলো রস পিপাসু বাঙালিদের যেমন সাহিত্য রসের খোরাক জোগায়, তেমনি দুর্গাপুজোর কয়েকটি দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গুলো বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রসারিত করে। শীতলগ্রামের শতকরা কুড়ি শতাংশ মানুষ বাজিকর সম্প্রদায়ের। বাজিকর সম্প্রদায়ের পুরুষরা বহুরূপী সেজে, বাজি দেখিয়ে এবং বাজিকর সম্প্রদায়ের মহিলারা হাবু গান করে সংসার নির্বাহ করেন। সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘যাদুকরী’ ছোটগল্পটিতে শীতলগ্রাম তথা সিদ্ধল গ্রামে বাজিকর সম্প্রদায়ের মানুষদের বসবাসের উল্লেখ রয়েছে।শীতলগ্রামের বাজিকর সম্প্রদায়ের দুর্গাপুজো কয়েকশো বছরের পুরোনো। শীতলগ্রামে বাজিকর সম্প্রদায়ের দুর্গাপুজো বীরভূম জেলার ব্যাতিক্রমী দুর্গাপুজো। শীতলগ্রামের বাজিকর সম্প্রদায়ের দুর্গাপুজোর মন্ত্র সংস্কৃত নয়, বাংলাতে পুজোর মন্ত্র উচ্চারণ করা হয়। এখানে দুর্গাপুজোয় সন্ধ্যারতি হয় না ।শীতলগ্রামে বাজিকরদের দুর্গাপুজোতে অষ্টমীর দিন মায়ের পদচিহ্ন পড়ে এবং মায়ের পদচিহ্ন দেখার জন্য জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন আসেন। শীতলগ্রামে বাজিকর সম্প্রদায়ের দুর্গাপুজোয় দশমীতে ঠাকুর বিসর্জন হবে– কোনোভাবেই এর ব্যাতিক্রম ঘটে না। আবার জেলার অন্যান্য দুর্গাপুজোর পুরোহিত যেখানে ব্রাহ্মণ সেখানে শীতলগ্রামের বাজিকরদের দুর্গাপুজোর পুরোহিত কোনো ব্রাহ্মণ নয়, অব্রাহ্মণ। বাজিকর সম্প্রদায়েরই কয়েকটি পরিবারের লোকজন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শীতলগ্রামে বাজিকরদের দুর্গাপুজো করে আসছেন। শীতলগ্রামে বাজিকরদের দুর্গাপুজোর পুরোহিতকে দক্ষিণা দানের ক্ষেত্রেও নিজেদের ইচ্ছে মতো দক্ষিণা দিয়ে থাকেন বাজিকরেরা। এমনকি শীতলগ্রামের বাজিকরদের দুর্গাপুজোয় সঙ সেজে গ্রাম পরিক্রমা করার একটি চল রয়েছে। শীতলগ্রামের বাসিন্দা সুকান্ত ঘোষ, সুশান্ত ঘোষরা জানিয়েছেন–শীতলগ্রামে বাজিকরদের দুর্গাপুজো দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন আসেন।