শম্ভুনাথ সেনঃ
এ এক ব্যতিক্রমী মেলা–“লাঠির মেলা”। রয়েছে মেলার ইতিহাস। প্রতিবছর এই একাদশীর দিনে দুর্গাপ্রতিমা নিরঞ্জনকে কেন্দ্র করে এই মেলা বসে বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের “কৃষ্ণনগর” গ্রামে। সন্নিহিত পছিয়াড়া, যশপুর, লোহাগ্রাম, কান্তোর, সালুঞ্চি এমন ১০-১২টি গ্রামের প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য এই মেলাপ্রাঙ্গণে আনা হয়। প্রতিমাগুলি একসঙ্গে পরিক্রমার পর পুনরায় যে যার গ্রামে গিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন করে। ধর্মমত নির্বিশেষে এই মেলায় মিলিত হয় হিন্দু-মুসলিম সব সম্প্রদায়ের মানুষ। এ এক ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং গ্রামীণ সংস্কৃতি ও সংহতি রক্ষার মেলবন্ধন। উল্লেখ্য, অন্যান্য বিকিকিনির পাশাপাশি এই মেলায় বিক্রি হয় ছোট-বড়, সরু-মোটা রং-বেরঙের নানা ধরনের বাঁশের লাঠি। বীরভূমে তাই এই মেলা “লাঠির মেলা” নামে খ্যাত। এই মেলা অন্তত ২৮০ বছরের পুরোনো। পরাধীন ভারতে এই বাংলায় বর্গী হাঙ্গামার সময়কাল থেকে এই মেলা হয়ে আসছে বলে স্থানীয় মানুষের অভিমত। সাহিত্যরত্ন হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের “বীরভূম বিবরণ” গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে কৃষ্ণনগর গ্রাম এবং তৎকালীন বর্গী হাঙ্গামার কথা উল্লেখ রয়েছে। সেই সময়ে আত্মরক্ষার জন্য একমাত্র উপায় ছিল বাঁশের লাঠি। লাঠি তৈরি এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হতো লাঠিয়াল বাহিনী। পরবর্তীতে এই মেলায় এখনো সেই লাঠি কেনাবেচার চল রয়েছে। সেকথা জানিয়েছেন গ্রামের এক প্রায় ৯০ ছুঁই ছুঁই প্রবীণ মানুষ কিরীটি রক্ষিত। আজও কৃষ্ণনগরে এই একাদশীর দিন দুর্গাপ্রতিমা নিরঞ্জনের মেলায় এসে নারী-পুরুষ সব বয়সী মানুষ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে অনেকেই কিনে নিয়ে যান বাঁশের লাঠি। তবে আগের তুলনায় লাঠি বিক্রেতাদের সংখ্যা অনেকটাই কম। এই লাঠি বিক্রির জন্য বিক্রেতারা বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই লাঠি তৈরিতে প্রস্তুতি নেন। করোনা অতিমারীর কারণে গত দু’বছর ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার, আবার সেই পুরোনো ঐতিহ্য নিয়েই আজ ৬ অক্টোবর, ২০২২ “লাঠির মেলা” বসেছে কৃষ্ণনগরের মাঠে। আর দুর্গাপ্রতিমা নিরঞ্জনকে কেন্দ্র করে ভিড় জমিয়েছেন গ্রামের মানুষজন।
ছবি এবং ভিডিওঃ ড. রবীন ঘোষ