দীপককুমার দাসঃ
কড়িধ্যা গ্রামের ফাঁকা প্রান্তর। আর লবান উৎসব উপলক্ষ্যে সেই প্রান্তর হয়ে উঠেছে আস্তে একটা আখড়া। বটগাছের নামালের পাশে লবাণ উৎসব এর পোষ্টারে ও লোকশিল্পের ছোঁয়া। প্রবেশপথ দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখা মিলল তালপাতার অনবদ্য ছাউনি। পাশেই খড়ের চালা মাটির দেওয়াল জুড়ে নানা ধরনের আলপনা। সামনে দুটি হাঁসের মূর্তি। পাশে লেখা-মাধুকরী। একপাশে একটি চালায় একতারা হাতে বাউল শিল্পী। অন্যচালায় আরেক শিল্পী দল। খড়ের চালা বাঁশের মাচায় তানপুরা নিয়ে গান ধরেছেন এক মহিলা লোকশিল্পী। সঙ্গতে ঢোল, খঞ্জনি, ঘুঙুর নিয়ে বসে পড়েছেন বাদ্যযন্ত্রীরা। কোনো মঞ্চ বা মাইক ছাড়াই এমন খোলা মঞ্চে মাটির গানে মুখরিত লবানের সকাল। সন্ধ্যায় হ্যারিকেনের আলোতেও আখড়ার এদিকে ওদিকে গান ধরেছে দেশ বিদেশের লোকশিল্পীরা। না আছে কোনো নির্দিষ্ট সূচী। তবুও লোকায়ত গানে মাটির গন্ধ, আর লবানের ঘ্রাণ। এমন ধরনের লবান উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল শনিবার ও রবিবার সিউড়ির অদূরে কড়িধ্যায়। বিগত ১২বছর ধরে এখানে অগ্রহায়ণ মাসে বসছে লবানের আসর। নিতাই দাস বাউলের উদ্যোগে এই উৎসবের সূচনা। অগ্রহায়ণ মাসে নতুন আতপ চালের যে উৎসব যেটা নবান্ন নামে পরিচিত, এখানে সেটাই লবান। আখড়াচর্যার এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বহু লোক শিল্পী এসেছিলেন দেশ বিদেশে থেকে। আর এই উৎসবকে আলাদা মাত্রা দিয়েছিলেন কৌশিক, সাগুফতা, সৌমেন, চন্দন, অয়নিকা, ছোটন, রামকৃষ্ণরা। চিরায়ত লোকসঙ্গীতকে বাঁচিয়ে রাখা ও দেশ বিদেশের লোকসঙ্গীতের মেলবন্ধনের লক্ষ্যে এই লবাণ উৎসব। সামগ্রিক পরিবেশে বাংলার লোকশিল্পের ছোঁয়া। খড়, তালপাতা, বাঁশ, চট এইসব উপকরণ দিয়ে তৈরি পরিবেশ এই লবাণ উৎসবকে আলাদা মাত্রা এনে দেয়। দুদিন ধরে চলা এই লবাণ উৎসবে ছিল না কোনো বাঁধা ধরা নিয়ম। খালি গলায় সুরেলা কন্ঠে মাটির গানে মন ছুঁয়ে গেলেন লোকশিল্পীরা। আখড়ার আনাচে কানাচে শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে লোকসঙ্গীতের সুর মুচ্ছর্ণায় ভাসল উপস্থিত মানুষজন। মাটির টানে মাটির গন্ধ গায়ে মেখে আখড়াচর্যার এই লবাণ মিলন ঘটালো দেশ বিদেশের লোক শিল্পীদের এই রাঙামাটির বীরভূমে।