দীপককুমার দাসঃ
রবিবার বিকেলে সিউড়ির প্রায় শতাধিক গাছপ্রেমী বিভিন্ন বয়সের মানুষ মিলিত হলেন সিউড়ির রবীন্দ্র পল্লীর রবীন্দ্র শিশু উদ্যানে।প্রকৃতিকে সবুজ করার লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে আদান প্রদান করলেন প্রায় দুই শতাধিক গাছ। সেই গাছের মধ্যে ছিল বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফল, ভেষজ উদ্ভিদ থেকে বাহারী উদ্ভিদ। শতাধিক গাছপ্রেমী মানুষের মধ্যে সিংহভাগ ছিলেন বিভিন্ন বয়সের মহিলা। রবিবার রবীন্দ্র শিশু উদ্যানে গার্ডেনিং অ্যান্ড মোর গ্রুপের উদ্যোগে আয়োজিত বাগানপ্রেমী মানুষরা জমায়েত হন। প্লাস্টিক মুক্ত পরিবেশের বার্তা দিতে কাগজের কাপে লাগিয়ে গাছের চারা বিলি করা হয়। প্রকৃতিকে সবুজ ও সৌন্দর্য্যয়ন করার লক্ষ্যে এই গ্রীণ মিটের আয়োজন করা হয়। দিন দিন জেলার শহরগুলিতে মাথা তুলছে গগনচুম্বী অট্টালিকা। হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। সিউড়ির গাছপ্রেমীরা বীরভূম জেলায় যারা গাছ লাগাতে ভালোবাসেন এমন মানুষদের নিয়ে গার্ডেনিং অ্যান্ড মোর নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেন। সিউড়ি তথা বীরভূমবাসী বাগান প্রেমীরা এই গ্রুপের মাধ্যমে বিভিন্ন গাছের পরিচর্যা, রোগ প্রতিকার থেকে তার খুঁটিনাটি জানতে পারেন। আর গ্রপ মিটের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে বিনামূল্যে গাছ আদান প্রদান করেন। এই গ্রুপের অ্যাডমিন কেয়া দেবনাথের উদ্যোগে বাগানপ্রেমী মানুষদের নিয়ে ফেসবুক পেজের সূচনা হয়। দু মাসের মধ্যেই তিন শতাধিক বাগানপ্রমী যুক্ত হয়েছেন এই গ্রুপে। কেয়া দেবনাথ বলেন, সিউড়িতে তথা বীরভূমে আমরা চেয়েছিলাম সবুজকে ছড়িয়ে দিতে। বীরভূমে সবুজ পাগল মানুষ অনেকেই আছেন। তারা আজ একজায়গায় মিলিত হয়ে গাছ আদান প্রদান করলেন। এদিন উপস্থিত ছিলেন সর্পবিদ দীনবন্ধু বিশ্বাস, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক ডঃ কল্যাণ ভট্টাচার্য, ডাঃ প্রত্যূষ মৈত্র, পৌলমী নায়েক। তাদের উত্তরীয় পরিয়ে ও গাছের চারা দিয়ে বরণ করা হয়। এরপর ভেষজ উদ্ভিদ ও তার গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক ডঃ কল্যাণ ভট্টাচার্য। ছত্রাক নাশকের ব্যবহার ও তার প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করেন পৌলমী নায়েক। ইকোসিস্টেম ঠিক রাখতে প্রাণী ও গাছের ভূমিকা বিষয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট সর্পবিদ তথা ওয়াইল্ড ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর সদস্য দীনবন্ধু বিশ্বাস। এরপর গাছপ্রেমী বিভিন্ন বয়সের মানুষ বিভিন্ন গাছের চারা তুলে দিন উপস্থিত মানুষজনকে। বিভিন্ন ফুল, পাতাবাহার সহ নানা ধরনের গাছ বিনামূল্যে মানুষকে দেওয়া হয় সবুজায়নের লক্ষ্যে। উপস্থিত এক গাছপ্রেমী জানান, এই ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এতে গাছের যেমন বংশবিস্তার হবে, তেমনি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আরো বেশি করে গাছ প্রেমীরা পাবেন। এতে পরিবেশ আরো সবুজ ও সুন্দর হবে। পরিবেশ দূষণ মুক্ত হবে। আমরা চাই এই সবুজ শুধু বীরভূম নয়, সারা বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক। এখানে এসেছিলেন সিউড়ি কালিগতি নারী শিক্ষা নিকেতনের শিক্ষিকা শ্রাবণী মন্ডল। তিনি বলেন মহিলারাই বেশি গাছ লাগান। যখন অবসর সময় পাওয়া যায় তখন গাছ লাগানো হয়। আর গাছ আদান প্রদানের মাধ্যমে বাড়িতে বাড়িতে কত যে গাছ লাগানো হচ্ছে তা এই গ্রুপ দেখলেই বোঝা যায। পরিশেষে এদিন গাছ আদান প্রদান করে সকলে পরিবেশ রক্ষার শপথ নেন। পরিবেশকে সবুজ করার লক্ষ্যে সকলে আরো উদ্যোগী হবেন বলে গাছপ্রেমীরা জানান। এদিন এই অনুষ্ঠান ঘিরে গাছপ্রেমীদের উৎসাহ ছিল যথেষ্টই।