বীরভূমের বগটুই গণহত্যার বর্ষপূর্তিতে স্বজনহারাদের দলে টানতে মরিয়া বিজেপি, তৃণমূল, সিপিআইএম

শম্ভুনাথ সেনঃ

এবছরের ২১ মার্চ বীরভূমের বগটুই গনহত্যার প্রথম বর্ষপূর্তি। আর এই বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তৃণমূল, বিজেপি, সিপিআইএমের রাজনৈতিক নেতারা নিহতদের স্মরণে হাজির হয় বগটুইতে। উল্লেখ্য, গত ২০২২ সালের এমন এক ২১ মার্চ রাত ৮ টা নাগাদ রামপুরহাটের বগটুই মোড়ে বোমার আঘাতে খুন হন রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের ভাদু সেখ। সেই খুনের বদলা নিতে নিমেষের মধ্যে গ্রামে ১২ টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামেরই মিনা বিবি নাজমা বিবি, রূপালী বিবি, মর্জিনা খাতুন কাজী সাজিদুর রহমান সহ মোট ১০ জন পুড়ে মারা যায়। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দগদগে ঘা এখনো স্পষ্ট। এই ঘটনায় এক স্বজনহারা মিহিলাল শেখ এদিন পাথরচাপরীর মাজারে চাদর চড়িয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ঠিক এক বছর আগেই মিহিলালের মা, স্ত্রী, কন্যা আগুনে পুড়ে মারা যায়। তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যেই তিনি পাথরচাপুরিতে দাতাবাবার কাছে ছুটে যান। উল্লেখ্য, বগটুই গ্রামে ১০ জন নিহতদের স্মরণে গড়ে তোলা হয় দুটি শহীদবেদী। নিহতদের পরিবারের অন্যতম মিহিলাল সেখের বাড়ির দোরগোড়ায় বিজেপির পক্ষ থেকে শহীদ বেদী নির্মাণ হয় আগেই। বিজেপির এই শহীদবেদী নির্মানের খবর পেয়ে তড়িঘড়ি বর্ষপূর্তির দুদিন আগেই তৃণমূলের পক্ষ থেকেও শহীদবেদী নির্মাণ করা হয়। যেন রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। এই ২১ মার্চ দুপুরে বগটুইতে নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্মরন সভা করে তৃণমূল কংগ্রেস। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিনহা, ডেপুটি স্পিকার আশিস ব্যানার্জি, জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, দলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় সহ তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতৃত্ব। শহীদ স্মরণে এসে তৃণমূল কংগ্রেসের দাবী, বগটুই কান্ডের পর রাজ্য সরকার নিহতদের পরিবার বর্গকে চাকরি, আর্থিক সাহায্য এবং বাড়ি নির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। আগামীদিনেও দল এই নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। অন্যদিকে এদিনই বিকেল চারটে নাগাদ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিতিতে বীরভূম জেলা বিজেপি নিহতদের স্মরণে কালাদিবস পালন করে। শহীদ বেদীতে তর্পনের পর একটি শান্তি মিছিল গ্রাম পরিক্রমা করে। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির ধ্রুব সাহা, দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপকুমার সাহা সহ জেলা নেতৃত্ব।পরে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। পাশাপাশি তিনি গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুতি দেন, প্রতিবছর ২১ মার্চ বগটুই গ্রামে এসে নিহতদের স্মরণ করবেন। অন্যদিকে এদিনই বিকেল ৪.৩০ টা নাগাদ বগটুই মোড় থেকে বুকে কালো ব্যাচ নিয়ে মৌনমিছিল করে সিপিআইএম। গোটা গ্রাম পরিক্রমার পর বগটুই মোড়ে একটি স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিপিআইএম এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সিপিআইএমের এই মৌন মিছিলের নেতৃত্ব দেন বীরভূম জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ, জেলা নেতা সঞ্জীব বর্মন, হাসন কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি মিল্টন রশিদ, ফরওয়ার্ড ব্লক দলের রাজ্য নেতৃত্ব নরেন চ্যাটার্জি প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *