শম্ভুনাথ সেনঃ
সৃণজা এই ছোট্ট মেয়েটা ছেলেবেলায় থেকে ছিল অসম্ভব চঞ্চল। আকাশে ঘুড়ি ওড়া দেখে বিস্ময়ে বাবার কাছে জানতে চেয়েছিল “আমিও কি উড়তে পারবো?” আধো আধো স্বরের সেদিনের সেই কথাগুলো যেন ক্রমে সত্যি হওয়ার পথে! “ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা”- “ইসরো” আয়োজিত ১৪ দিনের প্রশিক্ষণ শিবিরে সে ডাক পেয়েছে। মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কীয় “অন্তরীক্ষ জিজ্ঞাসা” অনুষ্ঠানে যুববিজ্ঞানী কার্যক্রমে আগামী ১৪-২৭ মে, ২০২৩ অংশ নিচ্ছে অন্ধপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায়। এদিকে সময় গড়িয়েছে। সেদিনের সৃণজা এখন ১৪ বছরের কিশোরী। বীরভূমের নূতনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।বাড়ি কীর্নাহারের স্টেশনপাড়ায়। বাবা সৌম্যজিৎ মল্লিক ও মা অদিতি মল্লিক ঐ স্কুলেই শিক্ষকতা করেন। সৃণজা তাদের একমাত্র কন্যা। মেধাবী সৃণজার ছোটো থেকেই আকর্ষণ গণিত ও পাদর্থবিদ্যর উপর। ইতমধ্যে বহু পুরস্কার অর্জন করেছে নানা প্রতিযোগিতায়। ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন অফ ফিজিক্স টিচার্স আয়োজিত NSEJS (NATIONAL STANDARD EXAMINATION FOR JUNIOR SCIENCE) পরীক্ষায় ন্যাশনাল টপার হিসেবে এই বছর সে পুরস্কৃত হয়েছে। তাঁদের পরামর্শ ক্রমে ISRO আয়োজিত তরুণ বিজ্ঞানী কার্যক্রম “YUVIKA” নামক সর্বভারতীয় পরীক্ষায় বসে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই ১৪ দিনের আবাসিক কর্মশালায়,সতীশ ধাওয়ান স্পেস রিসার্চ সেন্টারে, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় যোগ দেবে সৃণজা। হাতে কলমে শিখবে রকেট উৎক্ষেপণ,রকেট বিজ্ঞান,স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ। সঙ্গ পাবে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের। কৌতূহলী সৃণজা এখন সেই অপেক্ষায় সময় গুনছে। ভীষণ আনন্দিত! ছটফট করছে এই মহাকাশ বিজ্ঞানের দুনিয়ায় ছুটে যেতে।সামনে যে তার স্বপ্ন পূরণের হাতছানি। বড় হয়ে সে মুম্বাই IIT তে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করার পর ASTRO PHYSICS নিয়ে কাজ করতে চাই বলে সৃণজা জানিয়েছে। উল্লেখ্য,ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র “ইসরো” গত ২০১৯ সাল থেকে ভারতবর্ষের গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেধাবী, পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের জন্য নিয়ে এসেছে এই জনপ্রিয় প্রোগ্রাম “যুব বিজ্ঞানী কার্যক্রম”(YUVIKA)। অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য গ্রাম বাংলার শিশু বিজ্ঞানীদের মধ্যে স্পেস রিসার্চ, স্পেস টেকনোলজি, স্পেস সায়েন্স এবং স্পেস অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে আগ্রহ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি বৃদ্ধি করা। এ বছর গত ২০ মার্চ-৩রা এপ্রিল, ২০২৩ পর্যন্ত অনলাইনের মাধ্যমে “ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-Indian space research organisation (ISRO) শিশু বিজ্ঞানীদের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করে।বর্তমানে নবম শ্রেণীতে পাঠরত দেশের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য রেজিস্ট্রেশন করে। যার মধ্যে থেকে সারা দেশে অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে মোট ৩৫০ জন শিশু বিজ্ঞানী ইসরোর YUVIKA-2023 প্রোগামে অংশগ্রহণ করার জন্য চিহ্নিত হয়। হবু শিশু বিজ্ঞানীদের স্বপ্ন পূরণে সম্পূর্ণ নিঃখরচায় এমন একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ১৪-২৭ মে, ২০২৩। মোট ১৪ দিন ধরে এই ওয়ার্কসপ চলবে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত ৭ টি মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে। এ বছর এ জেলার কীর্ণাহারের অন্যতম মেধাবী ছাত্রী সৃণজা মল্লিক এই সুযোগ পাওয়ায় “বীরভূম জেলা শিশু বিজ্ঞান কংগ্রেস কমিটির পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ অভিনন্দন জানানো হয়। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বীরভূমের দুজন শিশুবিজ্ঞানী রামপুরহাটের সোহম মণ্ডল ও সিউড়ীর অতেন্দ্রিয় আচার্য এমন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিল। এ তথ্য জানিয়েছেন জেলার অন্যতম সমন্বয়ক তারক ব্যানার্জি।