
শম্ভুনাথ সেনঃ

বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিরিখে সারাদেশের ২০৫ টি তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের মধ্যে বীরভূমের “বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র” ভারত সেরা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবার। এ তথ্য জানিয়েছেন বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার প্রদীপ্ত মুখোপাধ্যায়।দেশের অন্যান্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে টোপকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিরিখে “বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র” শীর্ষে উঠে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উৎপাদন নিগম লিমিটেড (WBPDCL) এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পরিচালনা করে। বার্ষিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিরিখে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের অধীনে থাকা ‘কেন্দ্রীয় ইলেকট্রিসিটি অথরিটি’ দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির RANKING করে বলে জানা গেছে। এবার বীরভূমের বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পি.এল.এফ (plant লোড ফ্যাক্টর) ৯২.৩৮%। যা দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। উল্লেখ্য, ২০০০ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে এই বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। বক্রেশ্বর জলাধার, উপনগরী, ছাই ফেলার পুকুর সব মিলিয়ে প্রায় চার হাজার হেক্টর এলাকা জুড়ে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ৮০০ বেশি পরিবারের জমি নেওয়া হয়েছিল। ২০০ টি পরিবার আজও চাকরি পায়নি বলে তারা এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে পাঁচটি ইউনিটের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১০৫০ মেগাওয়াট। বাইরে থেকে তিনটি চিমনি দেখা গেলেও আসলে সেখানে রয়েছে পাঁচটি চিমনি। দু’ধারে দুটি করে চিমনি একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। মাঝের একটি চিমনী একটি ইউনিটের জন্যই দাঁড়িয়ে আছে। যাদের প্রত্যেকটির উচ্চতা ২২০ মিটার। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্ল্যান্টে কর্মীর সংখ্যা রয়েছে অন্তত তিন হাজার। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রত্যেকদিন কয়লা লাগে ১৪,০০০ টন। জলের পরিমাণ ৬০ হাজার টনেরও বেশি। তাকানো যাক ইতিহাসের পাতায়—! বামফ্রন্ট সরকারের আমলে নজিরবিহীন বিরোধিতার মধ্যেও এই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ১৯৮৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রথম ইউনিটের কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালের ৩১ মে। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল শ্যামল কুমার সেন প্রথম ইউনিটটির উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে উৎপাদনের নিরিখে “বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র” দেশের সেরা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। সেই আনন্দে উৎসাহিত বিদ্যুৎ কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ। বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এই সাফল্যের পিছনে সমস্ত কর্মী, ইঞ্জিনিয়ার, ফুয়েল ডিপার্টমেন্ট, মাইনিং ডিভিশন সহ জেলা প্রশাসনের অবদানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেনারেল ম্যানেজার প্রদীপ্ত মুখোপাধ্যায়। বীরভূমের এই বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্তমানে লাভজনক সংস্থারূপে এগিয়ে চলেছে বলেও তিনি জানান।

