বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের কৃষ্ণনগরে একাদশীর দিন প্রতিমা নিরঞ্জনকে কেন্দ্র করে বসে ১ দিনের “লাঠির মেলা”

শম্ভুনাথ সেনঃ

এ এক ব্যতিক্রমী মেলা —–“লাঠির মেলা”। রয়েছে মেলার ইতিহাস। প্রতিবছর একাদশীর দিনে দুর্গাপ্রতিমা নিরঞ্জনকে কেন্দ্র করে এই মেলা বসে বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের একটি প্রত্যন্ত এলাকা “কৃষ্ণনগর” গ্রামে। মেলা পরিচালনা করে স্থানীয় “যশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত”।পঞ্চায়েত উপপ্রধান পরিমল সাহা জানিয়েছেন কৃষ্ণনগর সন্নিহিত পছিয়াড়া, যশপুর, লোহাগ্রাম, কান্তোর, সালুঞ্চি, এমন ১১ টি গ্রামের প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য এই মেলা প্রাঙ্গণে জড় হয়। মেলায় মিলিত হয় ধর্মমত নির্বিশেষে হিন্দু-মুসলমান সব সম্প্রদায়ের মানুষ। তাই এই মেলা এখন সম্প্রীতির এক মিলন মেলা রূপে চিহ্নিত। অন্যান্য বিকিকিনির পাশাপাশি বিক্রি হয় রং বেরঙের ছোট-বড়,সরু-মোটা নানা ধরনের লাঠি। বীরভূমে তাই এই মেলা লাঠির মেলা নামে খ্যাত।এই মেলা অন্ততঃ ২৫০ বছরের পুরোনো। একসময় বর্গী হামলা থেকে বাঁচতে প্রতি বাড়িতে লাঠি রাখা রেওয়াজ ছিল। পরাধীন ভারতে এই বাংলায় বর্গী হাঙ্গামার সময়কাল থেকে এই মেলা হয়ে আসছে বলে স্থানীয় মানুষের অভিমত। সাহিত্যরত্ন হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের “বীরভূম বিবরণ” গ্রন্থে “বর্গী হাঙ্গামার” কথা উল্লেখ রয়েছে। সেই সময়ে আত্মরক্ষার জন্য একমাত্র উপায় ছিল লাঠি। লাঠি তৈরি এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হতো লাঠিয়াল বাহিনী। পরবর্তীতে এই মেলায় এখনো পৌরাণিক ঐতিহ্য বজায় রেখে লাঠি কেনা-বেচার চল রয়েছে। সেকথা নয়াপ্রজন্মকে জানান মেলায় আগত এক অধ্যাপক ড. রবিন ঘোষ। আজও কৃষ্ণনগরের এই একাদশীর দুর্গাপ্রতিমা নিরঞ্জনের মেলায় স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে অনেকেই কিনে নিয়ে যান বাঁশের লাঠি। ঝড়ে মহম্মদপুরের এক লাঠি বিক্রেতা খন্দেকার নিজামত হোসেন জানান ৭০ বছর ধরে এই মেলায় সে লাঠি বিক্রি করে। মেলা শেষে প্রায় সব লাঠি বিক্রি হয়ে যায় বলে লাঠি বিক্রেতাদের দাবি। ঠাকুর নিরঞ্জন এবং এই মেলা দেখতে এদিন বহু দর্শনার্থীদের ভিড় জমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *