শম্ভুনাথ সেনঃ
একটানা “নাম সংকীর্তন” গ্রাম বাংলার একটি প্রাচীন “ধর্মীয় লোক উৎসব”। এই উৎসব নিয়ে আসে গ্রামীণ সংহতি। বৈশাখ মাস থেকেই বীরভূমের অধিকাংশ গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় এই ২৪ প্রহর ব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন অনুষ্ঠান। সারা রাত্রি জুড়ে শ্রীকৃষ্ণের লীলা মাহাত্ম্য বর্ণনে কীর্তন পালাগান। গ্রামের মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই ধর্মীয় উৎসবে মেতে ওঠেন ধনী-দরিদ্র,জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে গ্রামের মানুষজন। বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের “পণ্ডিতপুর” গ্রামে ১৭ মে থেকে ৪ দিনের জন্য ২৪ প্রহর ব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন আজ ২০ মে শেষ হচ্ছে।
অনুষ্ঠিত হয় কীর্তনীয়া ব্রজাঙ্গনা ঘোষ ও শান্তিরাম মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে পালাকীর্তন। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে আসে আত্মীয়-স্বজন, পরিজনেরা। এই ক’দিন সারা গ্রাম জুড়ে উৎসবের মেজাজ! রং-বেরঙের ফুল,আলোক মালায় অপরূপ সাজে সেজে উঠে গ্রামের “নাটমন্দির”। ৪ দিন ধরে অবিরত হরেকৃষ্ণ নাম, রাত্রিতে কীর্তনীয়াদের “পালা কীর্তন”। বিকেল হলেই বাউল গানের আসর ছিল জমজমাট। সন্ধ্যায় গৌরমণ্ডলী ও আরতী পর্বে উপচে পড়ে ভিড়। এই ক’দিন ধরে এই চব্বিশ প্রহর অনুষ্ঠানে ঢল নামে আবাল বৃদ্ধ বনিতার। হালসোত, দৌলতপুর, কামালপুর, রূপশিমূল, গুনডোবা, বনহরি, দুবরাজপুর এলাকার মানুষজনের উপস্থিতিতে প্রতিদিনই লোকারণ্য উৎসব প্রাঙ্গণ! বছরের এই ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসবে মাতোয়ারা সারা গ্রাম। বসেছে গ্রামীণ মেলা। গ্রামীণ এই মহামিলনের উৎসব আজও ধরে রেখেছে লোকায়ত ধর্মীয় সংস্কৃতি।