উত্তম মণ্ডলঃ
কয়েক বছর আগে রাজনগর ব্লকের পদমপুর গ্রামের বাসিন্দা সুশান্ত মন্ডলের তাঁর বাড়ি সংলগ্ন স্থানে কয়েকটি আম গাছ লাগানোর ইচ্ছে হয়। এই উদ্দেশ্যে তিনি কয়েকটি নার্সারী থেকে নামকরা কয়েকটি প্রজাতির আমের কলম চারা এনে নিজ বাড়িতে লাগান। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। যে কয়টি নার্সারি থেকে তিনি নামিদামি প্রজাতির আমের চারা এনে লাগিয়েছিলেন, সেগুলি কোনোটিই নামিদামি প্রজাতির নয়। বাধ্য হয়ে তিনি সেসব কলমের চারা গুলি তুলে ফেলে দেন।
বেশ কয়েক জায়গায় প্রতারিত হওয়ার পর তিনি সংকল্প নেন এবার নিজেই কলম চারা তৈরি করবেন। এরপরই শুরু হয় তাঁর অধ্যাবসায়। এরপরই তিনি মোবাইলে ইন্টারনেট ঘেঁটে, গুগল, ইউটিউব দিনের পর দিন সার্চ করে এবং বিভিন্ন নার্সারিতে গিয়ে শিখে ফেললেন কিভাবে কলম চারা তৈরি করতে হয়। পাশাপাশি মাল্টি গ্রাফটিং বা একই গাছে অনেকগুলো প্রজাতির কলম কিভাবে তৈরি করতে হয়। এরপর রাজনগরের পদমপুর গ্রামের তাঁর বাড়ির সংলগ্ন বাগানে তিনি শুরু করেন আম গাছের কলম করা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা। একের পর এক কলম চারা তৈরি করতে থাকেন। মাসের পর মাস তাঁর এই চরম অধ্যবসায় তাঁকে অবশেষে সফলতা এনে দেয়। এক বছরের মধ্যেই তিনি তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল হাতেনাতে পেলেন। বেশ কয়েকটি আম গাছে কয়েক প্রজাতির আম ফলাতে সক্ষম হন। কয়েকটি আমগাছে তিনি মাল্টি-গ্রাফ্টিং করে অর্থাৎ বিভিন্ন প্রজাতির আম গাছের কলমের চারা তৈরি করেন।
অবশেষে সুশান্ত মন্ডল বাড়ি সংলগ্ন পুরো এলাকাটিকে নার্সারিতে পরিণত করলেন।
এখন তাঁর এই নার্সারিতে শোভা পাচ্ছে দেশী-বিদেশি হরেক রকম ফল ফুলের গাছের কলম চারা। আম, জাম, কাঁঠাল, কমলা লেবু, আপেল, আঙ্গুর, কি নেই তাঁর নার্সারিতে! এরই মাঝে সুশান্ত মন্ডলের অসাধ্য সাধনের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ সকলের সামনে এখন জ্বলজ্বল করছে। পদ্মশ্রী প্রাপ্ত ‘ম্যাংগো ম্যান” কলিমুল্লাহ খানের নাম তো সকলেই জানেন। কিন্তু রাজনগরের ‘ম্যাংগো ম্যান’ সুশান্ত মন্ডলের কথা বোধহয় অনেকেই জানেন না। অবশ্য সুশান্ত বাবুর নার্সারি একবার দর্শন করলেই জানতে পারবেন তিনি মাল্টি-গ্রাফটিং নিয়ে কত চেষ্টা, প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একটি আমগাছে চল্লিশ রকম দেশি-বিদেশি নামকরা প্রজাতির কলম করে তাতে আম ফলিয়েছেন।
একটা গাছে চল্লিশ এরকম প্রজাতির আম ভাবা যায়! এরকম একটা নয়, বেশ কয়েকটা গাছে তিনি এই মাল্টি গ্রাফটিং করেছেন। কোনটায় ২৮ রকম প্রজাতির, কোনোটার বা ১৪ থেকে ১৫ রকম প্রজাতির আম ধরছে সুশান্ত মন্ডলের গাছে। এখন তাঁর এই নার্সারিই ধ্যান-জ্ঞান। সুশান্ত বাবুর এই নার্সারি পরিচর্যাতে হাত লাগান তার সহধর্মিনী ও তাঁর বৌমা। সুশান্তবাবুর কাছ থেকে এলাকা সহ দূরদূরান্তের মানুষ সঠিক মূল্যে সঠিক কলমের চারাটি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সকলকে প্রতারিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচাচ্ছেন এই সুশান্ত মন্ডল। শুধু কিনতে নয়, হাজারো কৌতুহল নিয়ে কলমের চারা গুলি দেখতেও আসেন বহু দূর দূরান্তের মানুষ। তাঁর নার্সারিতে রয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত মিয়াজাকি আম সহ রেড পালমার, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, আলফানসো, মল্লিকা, আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাঙ্গো সহ ১২০ প্রজাতির আম গাছের কলম চারা। এছাড়া লেবুর প্রায় ৩৫ প্রজাতির লেবুর চারা রয়েছে। রাজনগরের “ম্যাংগো ম্যান” হিসেবে পরিচিত সুশান্ত মন্ডল জানিয়েছেন সরকারি সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে তিনি তাঁর ‘কলম চারা’ নিয়ে গবেষণার কাজ আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।