হিংলাজ মাতা মন্দির: সিন্ধু মরুভূমির বুকে এক পবিত্র তীর্থস্থান

নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ

হিংলাজ মাতা মন্দির (Hinglaj Mata Mandir), পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের হিংলাজ শহরের কাছে অবস্থিত একটি অতিপ্রাচীন ও পবিত্র হিন্দু তীর্থস্থান। করাচি শহর থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, হিংলাজ নদীর তীরে ও হিংলু পর্বতের কোলে অবস্থিত এই মন্দির সিন্ধু মরুভূমির বুকে হিন্দুদের জন্য এক অমূল্য ধর্মীয় কেন্দ্র।


ঐতিহাসিক পটভূমি
হিংলাজ মাতা, হিন্দু দেবী দুর্গার এক রূপ। এটি ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম, যেখানে দেবী সতীর দেহের অংশ পতিত হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। পৌরাণিক মতে, সতীর দেহ যখন শিব বহন করছিলেন, তখন বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্র দ্বারা দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করে বিভিন্ন স্থানে ফেলেন, যেগুলি পরবর্তীকালে শক্তিপীঠে পরিণত হয়। হিংলাজে সতীর মস্তক পতিত হয়েছিল, এমন বিশ্বাস বহু ভক্তের মনে গেঁথে আছে।


মন্দিরের বৈশিষ্ট্য
এই মন্দিরটি কোনও নির্মিত গর্ভগৃহ নয় বরং একটি গুহার ভিতরেই দেবীর প্রতিমা বা পবিত্র চিহ্ন (পিণ্ডী) পূজিত হয়। এটি ‘হিংলাজ শক্তিপীঠ’ নামেও পরিচিত। মন্দিরটি হিন্দুদের পাশাপাশি স্থানীয় মুসলিম বালুচ সম্প্রদায়ের কাছেও সমানভাবে পূজ্য। তাঁরা দেবীকে ‘নানী মা’ নামে সম্বোধন করেন।


তীর্থযাত্রা
হিংলাজ মন্দিরের বাৎসরিক তীর্থযাত্রা, যাকে ‘হিংলাজ যাত্রা’ বলা হয়, পাকিস্তানের অন্যতম বৃহৎ হিন্দু সমাবেশ। সাধারণত এপ্রিল মাসে এই যাত্রা অনুষ্ঠিত হয় এবং পাকিস্তানের সিন্ধু, পাঞ্জাব, এমনকি ভারত থেকেও বহু ভক্ত এতে অংশগ্রহণ করেন। কষ্টসাধ্য পাহাড়ি ও মরুভূমির পথ অতিক্রম করে ভক্তরা এই তীর্থে পৌঁছান এবং ‘জয় মা হিংলাজ’ ধ্বনি তোলেন।


সাংস্কৃতিক সহাবস্থান
হিংলাজ মন্দির শুধু ধর্মীয় নয়, এটি দক্ষিণ এশিয়ার এক বিস্ময়কর সাংস্কৃতিক সহাবস্থানের নিদর্শন। বহু মুসলিম স্থানীয়রাও এই মন্দির রক্ষা ও তীর্থযাত্রার নিরাপত্তায় সহায়তা করে থাকেন। এটি পাকিস্তানে ধর্মীয় সম্প্রীতির এক বিরল দৃষ্টান্ত।


হিংলাজ মাতা মন্দির কেবলমাত্র একটি তীর্থস্থান নয়—এটি হাজার বছরের পুরাতন সংস্কৃতি, লোকবিশ্বাস ও ঐতিহ্যের ধারক। হিন্দু-মুসলিম মিলনের এক অনন্য প্রতীক হিসেবে হিংলাজ মন্দির বর্তমান বিশ্বে ধর্মীয় সহনশীলতার বার্তা বহন করে। ভারতে বসবাসরত হিন্দুদের কাছেও এটি গভীর ধর্মীয় আবেগের কেন্দ্র, যদিও রাজনৈতিক সীমারেখা আজ তীর্থযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। তবুও, দেবী হিংলাজ মাতা তাঁর ভক্তদের মনে চিরন্তন আশ্রয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *