
মেহের সেখঃ
২৯ মে বৃহস্পতিবার সাহিত্য অকাদেমি ও ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে “সাহিত্য কতটা বদলেছে?” বিষয়ে দুদিনের সাহিত্যিক সম্মেলন আয়োজিত হল নয়া দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে। ২৯ মে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে অনুষ্ঠিত হওয়া দুদিনের এই সাহিত্যিক সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন করলেন মহামহিম রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু। মাননীয়া রাষ্ট্রপতি তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে বলেন আমাদের ১৪০ কোটি ভারতবাসীর এই পরিবার বহু ভাষা, অসংখ্য উপভাষা এবং বহুবিধ সাহিত্য পরম্পরায় সমৃদ্ধ। কিন্তু এই বিবিধতার মধ্যেও ভারতীয়ত্বের স্পন্দন পাওয়া যায়। আমাদের সামগ্রিক চেতনার মধ্যেই নিহিত রয়েছে ভারতীয়ত্বের এই বোধ। তিনি তাঁর ভাষণে গোপবন্ধু দাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ফকিরমোহন সেনাপতি, গঙ্গাধর মেহের, প্রতিভা রায় প্রমুখের উল্লেখপূর্বক জানান যে আজকের দিনের সাহিত্য উপদেশাত্মক হতে পারে না। সাহিত্যের প্রেরণাতেই মানুষ স্বপ্ন দেখে ও সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে। তিনি আরও বলেন চিরাচরিত মানবিক মূল্যবোধের স্থাপনাই কালজয়ী সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য। উক্ত সম্মেলনে বিশিষ্ট অতিথির পদ অলংকৃত করেন ভারত সরকারের সংস্কৃতি ও পর্যটন দপ্তরের মাননীয় মন্ত্রী শ্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত। তিনি বলেন সমাজ, সমাজের ভাবনা এবং সমাজের পরিস্থিতির দর্পণ হল এই সাহিত্য। দর্পণ হওয়ার সাথে সাথেই সমাজকে পথ দেখায় এই সাহিত্যই। তিনি আরও জানান যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আমাদের এই দেশ সাংস্কৃতিক পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সৃজনশীল সাহিত্যিকদের ভূমিকা। কার্যক্রমের শুরুতেই ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সচিব এবং অর্থনৈতিক উপদেষ্টা শ্রীমতী রঞ্জনা চোপড়া জানান ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অন্তর্গত সংস্থাগুলির মধ্যে সাহিত্য অকাদেমি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এর প্রভাবও ব্যাপক। গত কয়েক বছরে সাহিত্য অকাদেমি বহু উল্লেখযোগ্য কীর্তি স্থাপন করেছে এবং এর সক্রিয়তা রীতিমতো উল্লেখ্যনীয়। তিনি আশা ব্যাক্ত করে বলেন এই সম্মেলন সাহিত্যের পরিবর্তনের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির আরও বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হবে।

স্বাগত ভাষণের পর সাহিত্য অকাদেমির সভাপতি শ্রী মাধব কৌশিক মাননীয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং ভারত সরকারের সংস্কৃতি ও পর্যটন দপ্তরের মাননীয় মন্ত্রী শ্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতকে উত্তরীয় পড়িয়ে এবং বই উপহার দিয়ে অভিনন্দন এবং স্বাগত জানান। উদ্বোধনী অধিবেশনের পরেই শুরু হয়ে যায় ‘সিধা দিল সে : কবি সম্মেলন’। এই অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট উর্দু সাহিত্যিক শিন কাফ নিজাম এবং এতে বিশিষ্ট অতিথির পদ অলংকৃত করেন সাহিত্য অকাদেমির সভাপতি শ্রী মাধব কৌশিক। যেসব কবিরা এই অধিবেশনে নিজেদের কবিতা পাঠ করেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন রনজিৎ দাস (বাংলা), মামাং দাই (ইংরেজি), দিলীপ জাভেরি (গুজরাতি), অরুণ কমল (হিন্দি), মহেশ গর্গ (হিন্দি), শফি শক (কাশ্মীরি), দময়ন্তী বেশরা (সাঁওতালি) এবং রবি সুব্রহ্মন্যম (তামিল)। এই অধিবেশনের শুরুতে সাহিত্য অকাদেমির সচিব ড. কে. শ্রীনিবাসরাও সকল কবিকে উত্তরীয় পড়িয়ে অভিনন্দন ও স্বাগত জানান। অধিবেশনের সঞ্চালনা করেন অলকা সিনহা। ৩০ মে শুক্রবার সমগ্র দিন জুড়ে ‘ভারত কি স্ত্রীবাদী সাহিত্য : নয়া আধার কি তালাশ মে’, ‘ সাহিত্য মে পরিবর্তন বনাম পরিবর্তন কা সাহিত্য’ এবং ‘বৌদ্ধিক পরিপ্রেক্ষ মে ভারতীয় সাহিত্য কি নয়া দিশায়ে’ শীর্ষক তিনটি অধিবেশনে সাহিত্যের পরিবর্তিত রূপ নিয়ে আলোচনা করবেন প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় লেখক এবং পণ্ডিতেরা। পরিসমাপ্তিতে দেবী অহল্যাবাঈ হোলকারের ত্রিশতবার্ষিকী জয়ন্তী উপলক্ষে, হিমাংশু বাজপেয়ী এবং প্রজ্ঞা শর্মা অহল্যাবাঈ গাথা পরিবেশন করেন।
