নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই, ‘অ্যাপোলো ১১’ মিশনের মাধ্যমে আমেরিকা প্রথমবারের মতো মানুষকে চাঁদের মাটিতে নামিয়ে ইতিহাস রচনা করেছিল। “একজন মানুষের একটি ছোট পা ফেলার ঘটনা, কিন্তু মানবজাতির জন্য এক বিশাল অগ্রগতি”— নীল আর্মস্ট্রঙের সেই বিখ্যাত উক্তি আজও ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা। তবে এই ঘটনাটি যতটা গৌরবজনক, ঠিক ততটাই ঘেরা নানা ধোঁয়াশা ও বিতর্কে।
চাঁদে অবতরণ: সন্দেহের বীজ
বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষ বিশ্বাস করে যে, আমেরিকা আসলে চাঁদের মাটিতে পা রাখেনি, বরং সারা বিষয়টি একটি সুপরিকল্পিত চলচ্চিত্রের মতো স্টুডিওতে নির্মিত হয়েছে। ষড়যন্ত্রতত্ত্ববাদীরা একে বলেন ‘মুন হোক্স’ বা চাঁদ প্রতারণা। তাদের দাবি, সে সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে মহাকাশ প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে আমেরিকা এই নাটক সাজায়।
বিতর্কের প্রধান যুক্তিগুলি
১. পতাকার আন্দোলন: ষড়যন্ত্রতত্ত্ববাদীরা বলেন, মহাশূন্যে বাতাস নেই, অথচ ছবিতে দেখা যায় আমেরিকার পতাকা দোল খাচ্ছে।
২. ছায়ার দিকবিন্যাস: ছবিতে বিভিন্ন বস্তু বা মহাকাশচারীর ছায়া পড়ার দিক এক নয়, যা নাকি স্টুডিও লাইটের ইঙ্গিত।
৩. তারা-ছবি অনুপস্থিত: চাঁদের আকাশে তারা থাকার কথা, কিন্তু কোনো তারার ছবি দেখা যায় না।
৪. ভ্যান অ্যালেন বেল্ট: পৃথিবীকে ঘিরে থাকা তেজস্ক্রিয় বেল্ট পার করে চাঁদে পৌঁছানো নাকি অসম্ভব ছিল।
নাসার পাল্টা ব্যাখ্যা
নাসা ও বৈজ্ঞানিক মহল এই সমস্ত যুক্তির জবাব বহুবার দিয়েছে।
• পতাকাটি আসলে ধাতব খাঁটি রডে বাঁধা ছিল, যা খুলে বসানোর সময় একটু দুলে যায়।
• ছায়ার ভিন্নতা চাঁদের পৃষ্ঠের অসমতা ও আলোর প্রতিফলনের জন্য।
• তারার ছবি না আসার কারণ ক্যামেরার এক্সপোজার টাইম কম ছিল; তারা ক্ষীণ আলোয় ধরা পড়েনি।
• ভ্যান অ্যালেন বেল্ট পার হলেও, মহাকাশযাত্রীদের তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ ছিল নিরাপদ মাত্রায়।
প্রযুক্তির অগ্রগতি ও নতুন প্রমাণ
আজকের প্রযুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অ্যাপোলো মিশনের বহু প্রমাণ এখনো সঠিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত। বিভিন্ন চাঁদের মাটির নমুনা, লেজার রিফ্লেক্টর যন্ত্র, এবং সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণে সেই অবতরণের চিহ্ন দেখা যায়।
বিতর্ক থাকবেই—বিশেষ করে এমন এক যুগান্তকারী ঘটনার পেছনে, যা একটি দেশের মর্যাদা ও বৈশ্বিক নেতৃত্বের প্রশ্ন জড়িয়ে রেখেছে। তবে বিজ্ঞান বারবার প্রমাণ করেছে সত্যের পথেই এগিয়ে চলেছে মানবজাতি। ষড়যন্ত্রের কুয়াশা ছিন্ন করে আমরা যদি যুক্তি, প্রমাণ ও গবেষণার আলোয় হাঁটি, তবে ইতিহাসের সত্যরূপ স্পষ্ট হয়।
আপনার মতামত দিন:
আপনি কি মনে করেন চাঁদে অবতরণ সত্য ছিল? মতামত জানান আমাদের কমেন্ট বক্সে।