নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
মহাবিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় বস্তুগুলোর মধ্যে একটি হল ব্ল্যাক হোল (Black Hole)। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে মহাকর্ষীয় আকর্ষণ এতটাই শক্তিশালী যে আলো পর্যন্ত সেখান থেকে বের হতে পারে না। ফলে আমরা ব্ল্যাক হোলকে দেখতে পাই না, কিন্তু তার উপস্থিতির প্রভাবের মাধ্যমে আমরা তার অস্তিত্ব বুঝতে পারি।
ব্ল্যাক হোল কীভাবে তৈরি হয়?
ব্ল্যাক হোল সাধারণত তৈরি হয় তখন, যখন একটি বিশাল নক্ষত্র তার জীবনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে নিজের সমস্ত জ্বালানী শেষ করে ফেলে। তখন সেই নক্ষত্রটি নিজের অভ্যন্তরীণ মহাকর্ষে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধ্বসে পড়ে এবং এক মুহূর্তে তার ঘনত্ব এত বেড়ে যায় যে একটি “সিঙ্গুলারিটি” (singularity) তৈরি হয়। এই সিঙ্গুলারিটিই ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রে থাকে।
ব্ল্যাক হোলের গঠন
ব্ল্যাক হোলকে সাধারণত তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:
১. সিঙ্গুলারিটি – কেন্দ্রীয় বিন্দু, যেখানে মহাকর্ষীয় বল অসীম হয়।
২. ইভেন্ট হরাইজন (Event Horizon) – এটি এক ধরনের সীমানা, যার বাইরে কোনো কিছুই আর ফিরে আসতে পারে না।
৩. আ্যাক্রিশন ডিস্ক (Accretion Disk) – ব্ল্যাক হোলের চারপাশে গ্যাস ও ধুলোর ঘূর্ণায়মান বলয়।
ব্ল্যাক হোল কি পৃথিবীর জন্য বিপদজনক?
ব্ল্যাক হোল মহাবিশ্বে অনেক দূরে থাকে এবং তার আকর্ষণ শক্তি কেবল খুব কাছাকাছি বস্তুদের ওপর প্রভাব ফেলে। আমাদের সৌরজগতের আশেপাশে কোনো ব্ল্যাক হোল নেই, তাই আতঙ্কের কিছু নেই। তবে গবেষণার জন্য এটি এক অপার কৌতূহলের বিষয়।
ব্ল্যাক হোল নিয়ে গবেষণা
২০১৯ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো একটি ব্ল্যাক হোলের “ছবি” তুলতে সক্ষম হন। ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (EHT) ব্যবহার করে তারা দূরবর্তী M87 ছায়াপথের কেন্দ্রে থাকা একটি বিশাল ব্ল্যাক হোলের ছবি প্রকাশ করে, যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে।
ব্ল্যাক হোল ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান
ব্ল্যাক হোল কেবল জ্যোতির্বিজ্ঞানের নয়, কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও আপেক্ষিক তত্ত্বের জটিল সমন্বয়। স্টিফেন হকিং ব্ল্যাক হোল সম্পর্কিত তাঁর গবেষণায় “হকিং বিকিরণ” (Hawking Radiation) তত্ত্ব প্রদান করেন, যা ব্ল্যাক হোলের বাষ্পীভবন বুঝতে সহায়তা করে।
ব্ল্যাক হোল মহাবিশ্বের অন্ধকার অধ্যায় হলেও, এটি আমাদের জানার পরিধিকে বিস্তৃত করেছে। এটি যেমন বিজ্ঞানের অগ্রগতির প্রতীক, তেমনি অজানার প্রতি মানব সভ্যতার চিরন্তন কৌতূহলেরও প্রতিফলন।